রোনালদোকে দলে নেওয়া ঠেকাতে অ্যাতলেটিকো সমর্থকদের আন্দোলন
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ছাড়তে মরিয়া ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। তাই তার এজেন্ট নতুন দল খুঁজছে বেশ কিছুদিন থেকে। তবে ৩৭ বছর বয়সী রোনালদোকে দলে নিতে উৎসাহী হচ্ছে না কেউই। তবে কী চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলার স্বপ্ন অপূর্ণ থাকছে টুর্নামেন্টটির সর্বোচ্চ গোলদাতার? অবস্থাদৃষ্টে তাই মনে হচ্ছে। তাকে দলে নিতে আগ্রহ প্রকাশ করার পর ক্লাবের উপর ক্ষ্যাপা অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদের সমর্থকরা। রীতিমত অনলাইনে প্রতিবাদের ঝড় তুলেছে ক্লাবটার সমর্থকরা। জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম মিরর।
ইংলিশ জায়ান্টদের হয়ে আর খেলতে চান না রোনালদো। তাই ক্লাবকে অনুরোধ করেছিলেন আগ্রহী ক্লাব পেলে তাকে ছেড়ে দিতে। লিগে ষষ্ঠ হওয়া রেড ডেভিল শিবিরে থেকে গেলে এই মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলা হবে না তার। আর ক্লাবটার নতুন খেলোয়াড় সাইনিংয়ের পলিসিও পছন্দ হচ্ছে না তার। তাই সব মিলিয়ে ক্লাব নিয়ে সন্তুষ্ট নন তিনি।
দল বদলে এতটাই মরিয়া এই ৩৭ বছর বয়সী যে, ইউনাইটেডের প্রাক-মৌসুম ট্যুরে দলের সঙ্গে থাইল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া সফরেও যাননি। ক্লাব যদিও বলছে পারিবারিক কারণে তিনি দলের সঙ্গে নেই, কিন্তু ঘটনা বুঝতে বাকি নেই কারো। চেলসি, বার্সেলোনা, নাপলি, পিএসজি ও সবশেষ অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদকে নিয়ে গুঞ্জন উঠেছে রোনালদোর ভবিষ্যৎ জড়িয়ে। কিন্তু কোনটাই আলোর মুখ দেখেনি।
তবে নতুন খবর অনুযায়ী অ্যাতলেটিকো নিয়ে সম্ভাবনার পারদ দিনকে দিন চড়ছেই। লিগে তৃতীয় হওয়ায় নিজের সাবেক ক্লাবের নগর প্রতিদ্বন্দ্বীদের ডেরায় গেলে রোনালদো খেলতে পারবেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। তাছাড়া রিয়াল মাদ্রিদে খেলার সুবাধে এই শহরে ৯ বছর থেকেছেন তিনি। তাই দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়েছেন অনেকে। তবে এর জন্য অবশ্য ডিয়েগো সিমিওনের দলের বেতন কাঠামোয় নাটকীয় পরিবর্তন আনতে হবে। লা লিগার ফাইন্যান্সিয়াল রুল মেনে চলতে হলে কমাতে হবে খেলোয়াড়দের বেতন। যেটা বড় একটা প্রতিবন্ধকতা। বড় প্রতিবন্ধকতা আছে আরও একটি।
রোনালদো ২০০৯ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত নয় বছর খেলেছেন অ্যাতলেট্টিদের নগর প্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে। এ কারণে শত্রু শিবিরের সাবেক এই তারকাকে দলে দেখতে ইচ্ছুক নন ক্লাবটির ভক্ত-সমর্থকরা। তাই ক্ষ্যাপা সমর্থকরা একাট্টা হয়ে অনলাইনে ডাক দিয়েছে আন্দোলনের। হ্যাশট্যাগ কন্ত্রাসিআরসেভেন (সিএর সেভেনের বিপক্ষে) এই ট্যাগ লাইন ব্যবহার করে টুইটারে ক্লাবের সিদ্ধান্তের প্রতি নিজেদের অসন্তুষ্টির জানান দিচ্ছে। তাদের আশা এতে ক্লাবের সিদ্ধান্তে বদল আসবে।
‘যদি সে আমার অ্যাতলেট্টিতে আসে, আমি আমার দুটি সাবস্ক্রিপশনই বাতিল করব…এটা (অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ) কোন তলানি সংগ্রহের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র নয়…’ টুইটারে এভাবেই এক সমর্থক ক্লাবের সিদ্ধান্তের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছেন। আরেক সমর্থকের মন্তব্য, ‘এটা শুধু অ্যাতলেটিকো সমর্থকদের বেলাতেই নয়, প্রত্যেক ক্লাবের উচিৎ রোনালদোকে প্রত্যাখ্যান করা!’
ক্লাবটির আরেক সমর্থক তো রোনালদো কীভাবে দলকে ধ্বংস করে দেবেন তারই ফিরিস্তি দিলেন, ‘সে একজন ভাঁড় যে এমন সবকিছুর প্রতিনিধিত্ব করে যা অ্যাতলেট্টিদের সঙ্গে যায় না। এটা লকার রুমকে ধ্বংস করে দেবে, এমনকি সমর্থকদের এবং সবকিছুই যা সে স্পর্শ করবে। এমনকি এটা খেলার মাঠেও টিকবে না, (সে) পরিষ্কার পতনের পথে।’
আরকজন ক্লাবকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন এই ক্লাব ব্রান্ডভ্যালু , ইমেজস্বত্ব, কিংবা অর্থনৈতিক সচ্ছলতার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় খেলা ও সামাজিকতায়
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সঙ্গে রোনালদোর আরও ১২ মাসের চুক্তি রয়েছে, যারা তাকে প্রতি সপ্তাহে ৫ লাখ পাউন্ড বেতন দিচ্ছে। এই মৌসুমে ক্লাবটি রোনালদোকে হিসেবে ধরেই পরিকল্পনা করছে এবং রোনালদো যে বিক্রির জন্য নয় তা বেশ কয়েকবার বলেছেন দলটার কোচ এরিক টেন হ্যাগ। তবে অখুশি রোনালদোকেও দলে চান না এই ডাচ কোচ। মিরর ফুটবল জানাচ্ছে, ইউনাইটেড গোপনে মেনে নিয়েছে অখুশি রোনালদো ক্লাবটার জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। ইউনাইটেডের সূত্রের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, বিগত একমাস ধরে টেন হ্যাগ ড্রেসিং রুমের পরিবেশ ঠিক করতে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন এবং তিনি চান না রোনালদো সব ভণ্ডুল করে দেন।
রোনালদোর ভবিষ্যৎ যেন ক্রমশ ধোঁয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে।