পতেঙ্গা থেকে সাইক্লিং করে রাঙামাটি…
ছবি ও লিখাঃ ইসমাইল হোসেন নয়ন ( এডমিন - Insects of Nature, সদস্য - Patenga Cyclist Chittagong.)
পাহাড় আমার খুবই পছন্দের। অনেকদিন ধরে রাঙামাটি যাওয়ার ইচ্ছা ছিল,আগে কখনও যাওয়াও হয়নি। ঠিক করেছিলাম গেলে প্যাডেলিং করেই যাব। প্ল্যান’টা শেয়ার করলাম কোন প্ল্যানিংকে না বলা ছোট ভাই সাইফুল কে। আর বলতে বাকি রাখে না যে সে এবারও রাইডের সঙ্গী হচ্ছে আমার। সাইফুলের সাথে আমাদের এই রাইডে আরো যুক্ত হোন পারভেজ রনি ভাই।
রাইড শুরু ভোর ৬ টা থেকে… সিটি পেরিয়ে কাপ্তাই রোড হয়ে রাউজান ঢুকে পড়লাম, দারুণ ছন্দে প্যাডেলিং হচ্ছে। রাউজান পেরিয়ে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের স্বাগতম গেইটে প্রবেশ করলাম কিছুদূর প্যাডেলিং করার পর রাঙামাটি রাইডের ফিল শুরু একটা ছোট আপহিল দিয়ে। এটা পার হওয়ার পর বুঝলাম খবর আছে! একটু সামনে যাওয়ার পর দেখলাম রাস্তা উপরের দিকে চলে গেছে। সাইকেল নিয়ে উপরের দিকে উঠতে হবে। শুরু হলো আপহিল উঠা। রাস্তা ঘুরে ঘুরে শুধু উপরের দিকে উঠছে। এ ওঠার যেন শেষ নেই। এবার ডাউনহিল পেলাম ডাউনহিলে নামার উল্লাসে আপহিলের কষ্ট ভুলেই গেলাম।
ডাউনহিল শেষেই শুরু হলো আবার আপহিল। অনেক দূর থেকে পাহাড়ের শরীর বেয়ে ওঠা আপহিল দেখে রক্ত হিম হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা। আবারো ডাউনহিল, কোন রকমে পর্যায়ক্রমে এভাবে একটু আপহিল ও একটু ডাউনহিল শেষ করে পৌঁছে গেলাম রাঙামাটি সদরে।
তারপর রাঙামাটি সাইক্লিস্ট এর এডমিন তারেক ভাইকে কল দিলাম। উনি এসে সাথে সাথে ৪০০ টাকার মধ্যে ডাবল বেড একটা রুম ঠিক করে দিলেন। এমনিতে ঐ হোটেলের ভাড়া আরো বেশী তারেক ভাইয়ের রেফারেন্সে কম টাকায় পেলাম। একটু ফ্রেশ হয়ে নামাজ আদায় করে দুপুরের খাবার খেতে বাজারে গেলাম। খাওয়া দাওয়া শেষে একটা ২ ঘন্টার লম্বা ঘুম দিলাম। ঘুম থেকে উঠে রাঙামাটি সাইক্লিস্ট এর বুলেট ছোট্ট জোবেনরে কল দিলাম “কই তুমি..? এসো তোমাদের রাঙামাটি ঘুরে দেখাও আমাদের “। আমরা রেডি না হতে হতে সে হাজির। সে আমাদের রাঙামাটি পর্যটন ও আসামবস্তির ব্রীজ পাশাপাশি আরো কয়েকটি স্পট ঘুরে দেখালো। আর আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে ছোটবেলা থেকে বুঝে আসছি যে একটা ব্যাপার রাঙামাটি মানে ঝুলন্ত ব্রীজ আর ঝুলন্ত ব্রীজ মানে রাঙামাটি। ব্যাপার’টা যদিও এমন নয় তবে আমাদের শৈশব বলছে ব্যাপার’টা এমন।
পরেরদিন সকাল সাড়ে ছয়টায় যখন রাঙামাটি রিজার্ভ বাজারে প্যাডেলিং করতেছি তখন চারিদিক ভোরের আলোকছটার আলোকিত। দিগন্ত রেখায় লাল আভা হারিয়ে উঁকি দিচ্ছে কুসুম লাল সূর্যখানি।
সারি সারি অস্থায়ী এবং স্থায়ী দোকানের সামনে একে একে ভ্যান, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা করে বাগান থেকে লিচু নিয়ে আসছে বাগান ব্যাপারীরা। পাইকাররা সেই লিচু ঘিরে জটলা করছে। অনেক পাইকার ইতোমধ্যে লিচু কেনা শেষ করে বসে আছে। একটা দোকানে তখন লিচু নামছিল, আমি মোবাইল দিয়ে ছবি তুলছি, এসময় দোকানের মালিক বের হয়ে এসে আমাকে একটা গোছা হতে একটা লিচু ছিড়ে নিয়ে বললেন, “মুখে দেন… এইটা হইল মাদ্রাজি লিচু… রোজ পাওয়া যায় না…”। মুখে দিয়ে বুঝলাম লিচুটা সম্পূর্ণ ভিন্ন স্বাদের এবং সত্যি খুবই সুস্বাদু।
মানুষ শখ করতে ভালোবাসে। শখ পূরণের চেষ্টায় কোনো ত্রুটি থাকতে নেই।
সাইকেলে চড়ে ঘুরে বেড়াবেন দেশের পর্বত থেকে পর্বতে, আনাচকানাচে, পথে–প্রান্তরে।
Congress bhaiya
Congress Dst
প্রথমেই সাধুবাদ এবং শুভকামনা এমন সুন্দর একটা ভ্রমনচিন্তা মাথায় আনার জন্যে। সাইকেলে দেশের আনাচে কানাচে ঘুড়ে বেড়ানোটা যে কতটা উত্তেজনার, এডভেঞ্চারের তা না উপভোগ করলে বুঝানো সম্ভব না। বেশ কিছুদিন আগে সাইকেল চালিয়ে খুলনা বিভাগ ঘুরতে বেরিয়েছিলাম।
এরকম ভ্রমনের জন্যে মনের ইচ্ছাই সব থেকে বড়। পরিচিত এক ভাই হাজার টাকায় কয়েক জেলা ঘুড়ে ফেলেছিলেন। তাই আর দেরী কেন? হ্যাপি ট্রাভেলিং।
আমাদের এই সমাজে অবক্ষয়ের দুম্রজাল ডিঙিয়ে সাইক্লিং তারুণ্যকে অনেকটাই এগিয়ে দিয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নাই।
একটা সময় তারুণ্য প্রায় ঘর বন্দী হতে বসেছিল, তারা মজে থাকত কম্পিউটার গেম ও ভার্চুয়াল জগত নিয়ে। পিতা মাতারা শঙ্কিত থাকত তাদের শারীরিকভাবে সুস্থ ও স্বাভাবিক বেড়ে উঠা নিয়ে…! আর সেই জায়গায় সাইক্লিং অনেকটাই সমাধান দিয়েছে, তারুণ্যকে ঘরের চার দেয়ালের ভেতর থেকে টেনে এনেছে প্রকৃতির সবুজ আঙিনায়, দিয়েছে প্রাণচঞ্চলতা।
নতুন যারা আঁকাবাঁকা পাহাড়ি এই পথে রাইডে আসতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে , ‘দক্ষ চালক হওয়ার পাশাপাশি লম্বা রাস্তা পাড়ি দেওয়ার জন্য মনোবলটা থাকতে হবে। সাইক্লিং করে আপনি আনন্দটা অনেক বেশি অনুভব করবেন। একটা রাইড বা ভ্রমণ শেষ করার পর যে আনন্দ-উৎফুলস্নতা কাজ করে সেটা মোটরসাইকেলে নাও পেতে পারেন। সাইক্লিং আগে যতটা কঠিন ছিল এখন তা অনেকটা কমে এসেছে। আগে সবাই বলত সাইকেল না চালিয়ে মোটরসাইকেল কিনতে, এত কষ্ট করে চালানোর কি দরকার? কিন্তু এখন যেখানেই যায় মানুষ সাইক্লিং করাকে অনেক বেশি উৎসাহ দেয়। আশা করি এ ধরনের ভ্রমল অভিজ্ঞতা যত বেশি ছড়িয়ে পড়বে দেশে সাইক্লিং করার প্রবণতা আরও অনেক বেশি বৃদ্ধি পাবে।’