এস্তোনিয়ার জালে পাঁচ গোলেই যত রেকর্ড মেসির!
২০১৯ সালে ব্রাজিলের বিপক্ষে হারের পর থেকেই অপরাজিত আর্জেন্টিনা। তাদের অপরাজিত থাকার রেকর্ড আরও বড় করার সুযোগ ছিল রোববার (৫ জুন)। সুযোগটা হেলায় হারাতে দেননি লিওনেল মেসি। ফিফা র্যাংকিংয়ে ১১০ নম্বরে থাকা এস্তোনিয়াকে গতকাল শেখালেন ফুটবল। একে একে পাঁচটি গোল করে তছনছ করে দিলেন রেকর্ড বুক। ক্লাব ক্যারিয়ারে সবচেয়ে অনুজ্জ্বল সময়টাতে মেসি যেন হয়ে উঠছেন আরও বেশি আর্জেন্টাইন।
লিওনেল মেসি ৫-০ এস্তোনিয়া। এটাই আসলে ম্যাচের ফল ছিল। ফিফা র্যাংকিংয়ের ১১০ এ থাকা এস্তোনিয়া যে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে হারবে – এটা তো অবধারিতই ছিল। বরং মেসির সঙ্গে মাঠ ভাগাভাগি করে খেলতে পারাটাই তাদের কাছে বড় ব্যাপার ছিল। কাল অবশ্য খুব কাছ থেকেই তারা জেনেছে, মেসি একজন ভিনগ্রহের বাসিন্দা। গুণে গুণে পাঁচবার বল এস্তোনিয়ার জালে পাঠিয়েছেন আর্জেন্টিনার অধিনায়ক। একটি গোলের জন্য ডাবল হ্যাটট্রিক করতে না পারলেও রেকর্ড বুকে বড়সড় তোলপাড় তুলতে এটুকুই যথেষ্ট ছিল।
জাতীয় দলের হয়ে এর আগে পাঁচ গোল না থাকলেও ক্লাব ক্যারিয়ারে এক ম্যাচেই পাঁচ গোল করার অভিজ্ঞতা ছিল মেসির। ২০১২ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বেয়ার লেভারকুসেনের বিপক্ষে শেষ ষোলোতে ঘরের মাঠে ৭-১ ব্যবধানে জিতেছিল বার্সেলোনা। সে ম্যাচে বার্সার ৭ গোলের পাঁচটিই ছিল মেসির। ক্লাবের হয়ে অবশ্য পাঁচ গোল করা একমাত্র ফুটবলার নন মেসি। এক ম্যাচে পাঁচ গোল আছে লেভানদোভস্কি, আগুয়েরোসহ অনেকরই। জাতীয় দলের হয়েও পাঁচ গোল করা খেলোয়াড় অনেক। কিন্তু ক্লাব ও জাতীয় দল উভয় জায়গা বিবেচনায় নিলে লিও মেসি অনন্য। ক্লাব ও জাতীয় দল -উভয় পক্ষের হয়ে ম্যাচ পাঁচ গোল করার রেকর্ড শুধুই মেসির।
গতকাল ৪৭ মিনিটেই হ্যাটট্রিক সম্পন্ন করেন মেসি। আর তাতেই এক অনন্য রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলেন আর্জেন্টিনার নাম্বার টেন। ৮৫ ম্যাচে ৮৪ গোল নিয়ে এতদিন জাতীয় দলের হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় চার নম্বরে ছিলেন হাঙ্গেরির কিংবদন্তি ফেরেঙ্ক পুসকাস। হ্যাটট্রিকে তাকে ছুঁয়ে ফেলা মেসি পরে আরও দুই গোল করে ছাড়িয়ে যান মাইটি ম্যাগিয়ার্স তারকাকে। সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় প্রথম তিনটি স্থানের নামগুলো এতদিনে জানা হয়ে গেছে সবার। কারণ কিছুদিন আগেই রেকর্ডবুক তছনছ করেছেন মেসির রাইভাল ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। ১১৭ গোল নিয়ে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন তিনি। ১০৯ গোল নিয়ে দুইয়ে আছেন ইরানের আলি দাইয়ি। তিনে থাকা মালয়েশিয়ার মোখতার দাহারিকে ছাড়িয়ে যেতে অবশ্য বেশি সময় লাগার কথা নয় মেসির। তার গোল সংখ্যা ৮৯টি।
পুসকাসকে ছাড়িয়ে যাওয়ার দিনে মেসি পেছনে ফেলেছেন ফুটবলের রাজা পেলেকেও। পেশাদার ফুটবলে পেলের স্বীকৃত গোল ৭৬৭টি। এস্তোনিয়ার বিপক্ষে হ্যাটট্রিক পূর্ণ হতেই মেসি গিয়ে বসেন পেলের পাশে। পরে আরও দুই গোলে পেলেকে ছাড়িয়ে যাওয়া মেসির পেশাদার ক্যারিয়ারের গোল এখন ৭৬৯টি।
রেকর্ড মেসি আরও গড়েছেন। ক্যারিয়ারে ৭৬৯টি গোল করা মেসি সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন আরও ৩৩১টি গোল। যার অর্থ মেসি তার ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত সরাসরি ১১০০ গোলে অবদান রেখেছেন। ১১০০ গোলে অবদান রাখা প্রথম ফুটবলারটাও মেসিই। দ্বিতীয় স্থানে থাকা নামটিও অনুমিতই। ফুটবলের কমবেশি সব রেকর্ডই তো হয় মেসির নতুবা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর। এখানেও দুইয়ে রোনালদোই। ১০৪৫টি গোলে অবদান রেখেছেন তিনি। রোনালদোর এই কীর্তি গড়তে খেলতে হয়েছে ১১২১ ম্যাচ। অন্যদিকে মেসি ৯৭৪ ম্যাচেই ১১০০!
মেসির এই রেকর্ডটি কতটা কঠিন তা একটা পরিসংখ্যানেই বোঝা যাবে। এই মৌসুমে ব্যালন জয়ের দৌড়ে বেনজেমার প্রতিদ্বন্দ্বী লিভারপুলের মোহামেদ সালাহ ক্লাব লিভারপুল ও জাতীয় দল মিসরের হয়ে গোল করেছেন ৩৬টি, করিয়েছেন ১৩টি। এই গতিতে যদি আগামী মৌসুমগুলোতেও তিনি খেলে যান তবে মেসির পাশে বসতেই তার লেগে যাবে ২২ বছর!