পদ্মা সেতুর দুই পাড়ে দুই থানা উদ্বোধন

পদ্মা সেতুর নিরাপত্তায় দুই পাড়ে চারতলা ভবনবিশিষ্ট দুটি নতুন থানার উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

0 19,213

মঙ্গলবার (২১ জুন) বিকেলে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ থানা দুটির উদ্বোধন করেন তিনি।

পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষ্যে এরই মধ্যে সব কার্যক্রম শেষ করে থানা দুটিতে জনবলও পদায়ন করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আল্লাহর রহমতে সম্পূর্ণ বাংলাদেশের টাকায় পদ্মা সেতু তৈরি করেছি। এই পদ্মা সেতু রক্ষণাবেক্ষণ, যারা যাবে তাদের নিরাপত্তা বিধান এটাও আমাদের কর্তব্য। কাজেই পদ্মা সেতুকে সুরক্ষিত করা এবং যাত্রী সেবা দেয়া বা আশেপাশে যে জনগণ তাদেরও সেবা দেয়া আমাদের কর্তব্য। সে জন্য আমরা দুটি থানা; জাজিরায় পদ্মা সেতু দক্ষিণ আর মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মা সেতু উত্তর—এই দুটি থানার আধুনিক ভবন সম্পন্ন করা হয়েছে।’

সেতুর দুই প্রান্তের প্রবেশমুখে গড়ে তোলা নান্দনিক চারতলা থানা ভবন শুধু যোগাযোগই নয়, সেতু ঘিরে বদলে যাওয়া এলাকার নিরাপত্তার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। দুটি থানা মূলত সেতুর নিরাপত্তা এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার সাধারণ মানুষের আইনি সহায়তার জন্য কাজ করবে।

প্রতিটি থানায় একজন সহকারী পুলিশ সুপারসহ ৪০ জন করে পুলিশ সদস্য দায়িত্বে থাকবেন বলে জানিয়েছেন মুন্সীগঞ্জ পুলিশ সুপার আবদুল মোমেন।

ড. ইউনূস প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের মর্যাদা ও সক্ষমতার প্রতীক পদ্মা সেতু। আপনারা জানেন, আমাদের দেশের একজন বিশ্বখ্যাত মানুষ হলেও একটা ব্যাংকের এমডি পদ তার বয়সের কারণে ছেড়ে দিতে হচ্ছে সেটা তিনি মানতে পারেননি। একদিকে আমাদের সরকারের বিরুদ্ধে দুই-দুইটা মামলা করে হেরে গেছে, পরবর্তীতে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের কাছে তদবির করে—যেভাবেই হোক আমাদের পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে দিয়েছিল। দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ আমাদের ওপর নিয়ে আসে। যখন দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ করতে পারে না তখন বলে দুর্নীতির ষড়যন্ত্র ছিল। এটাকে আমি চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম এবং সেই থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমরা বাংলাদেশের মানুষ জাতির পিতার ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছি, কাজেই পদ্মা সেতু নিয়ে যখন মিথ্যা অপবাদ দেয়া হয় এবং একটি মামলাও করে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক কানাডার আদালতে, সেই আদালতের রায়ে স্পষ্টভাবে কোর্ট বলে দেয়—এখানো কোনো দুর্নীতি তো হয়নি, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক যেসব অভিযোগ করেছে সেগুলো সব ভুয়া, বানোয়াট, মিথ্যা। এই কথার পরে তো আর কোনো কথা থাকে না, কিন্তু তারপরও যারা আমাদের বদনাম দিয়েছে তাদের টাকায় আমি পদ্মা সেতু করবো না এটাই আমার সিদ্ধান্ত ছিল।’

বঙ্গবন্ধুর গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর এ দেশের দরিদ্র, শোষিত-বঞ্চিত মানুষ, গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষের দিকে কেউ তাকানোর প্রয়োজনই মনে করেনি। অবশ্য মনে করবে কীভাবে! যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে তারা ক্ষমতা নেয় ভোগের জন্য। ক্ষমতাটা তাদের ভাগ্য গড়ার জন্য। যেহেতু সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী তারা ব্যস্ত থাকবে কীভাবে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখবে। একটার পর একটা ১৯-২০টার মতো ক্যু হয়। সারা রাত কারফিউ থাকে। বাংলাদেশের মানুষের কোনো অধিকারই ছিল না। না স্বাধীনভাবে চলার অধিকার-না বাঁচার অধিকার।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের আসার পর থেকে আমরা জাতির পিতার নেয়া গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প আবার চালু করি, পাশাপাশি দরিদ্র-হতদরিদ্র মানুষের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহ নির্মাণ করে পুনর্বাসনের পদক্ষেপ আমরা নিই। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশের একটি মানুষও ভূমিহীন থাকবে না।’
এসময় মুজিববর্ষের বিভিন্ন অনুষ্ঠান করতে গিয়ে বেঁচে যাওয়া টাকা দিয়ে গৃহহীন মানুষকে ঘর করে দেয়ায় পুলিশ বাহিনীকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে পুলিশ বাহিনীর কল্যাণে আওয়ামী লীগ সরকারের নেয়া উদ্যোগ তুলে ধরেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘রাজনীতির নামে এখন যারা আমাদের বিরোধিতা করে। বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস এবং তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ফলে আমাদের অনেক পুলিশ সদস্যকে প্রকাশ্য দিবালোকে তারা মেরেছে, হত্যা করেছে গাইবান্ধা, রাজশাহীসহ বিভিন্ন জায়গায় এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। তাদের রাজনীতি জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারা আর আগুন দেয়া। রেলে-লঞ্চে-বাসে-কোথায় না আগুন দিয়েছে তারা। এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছে সেটাই নাকি তাদের আন্দোলন। যা জনগণ কখনোই সমর্থন করেনি। এই আন্দোলন ঠেকাতে গিয়ে অনেক পুলিশকে জীবন দিতে হয়েছে, আহত হয়েছে, পঙ্গু হয়েছে। আমরা চাই আমাদের দেশের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকবে।’

পুলিশের সাফল্য তুলে ধরে তিনি বলেন, মাদক এবং অস্ত্র, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে তার দিকে বিশেষভাবে আরও দৃষ্টি দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকলেই আমরা অর্থনৈতিক উন্নতি করতে পারবো। যদিও আজ বিশ্বব্যাপী যে সমস্যা একদিকে করোনাভাইরাস অতিমারি, তারপরে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ। যার ফলে সারা বিশ্বেই আজকে খাদ্যের অভাব, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে, মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। একটা অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। ইতোমধ্যে আমি সবাইকে আহ্বান করেছি, সারা বিশ্বে যখন অভাব দেখা দিচ্ছে, জিনিসের দাম বেড়ে গেছে, এমনকি উন্নত দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছে। ইংল্যান্ডের মতো জায়গায় একটি পরিবার কতটুকু ভোজ্যতেল কিনতে পারবে সেগুলো মেপে দেয়া হচ্ছে। কাউকে অধিক পরিমাণে কিনতে দেয়া হচ্ছে না। জার্মানির মতো জায়গায় এমন অবস্থা। আমেরিকার অবস্থা আরও খারাপ। সেখানে প্রত্যেকটা খাদ্যদ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের দেশে এখনো আমাদের প্রাণপণ চেষ্টা হচ্ছে সব কিছু নিয়ন্ত্রণে রাখা। আমাদের উর্বর মাটি, ১ ইঞ্চি জমি যেন খালি না থাকে। যে যা পারবেন, উৎপাদন করবেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ৮ মে সারদা পুলিশ একাডেমিতে যে ভাষণ দিয়েছিলেন সেখানে তিনি বলেছিলেন, আপনারা জনগণের সাহায্য-সহযোগিতায় এ দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করবেন। আমি দুনিয়ার অনেক জায়গায় গিয়েছি। গ্রেট ব্রিটেনে দেখেছি একজন সিপাহীকেও জনসাধারণ শ্রদ্ধা করে। কোনো পুলিশ কর্মচারীকে দেখলে তারা আশ্রয় নেয়ার জন্য তার কাছে দৌড়ে যায়। তারা মনে করে পুলিশ তাদের সহায়। আমাদের দেশেও পুলিশ বাহিনী সেভাবেই জনগণের আস্থা অর্জন করবে যেন জনগণ মনে করে যে তার জীবন রক্ষায়, মান রক্ষায় পুলিশই হচ্ছে শেষ ভরসা। কাজেই পুলিশের কাছেই তারা সেই আশ্রয়টা পাবে, সেই ভরসার স্থান হিসেবে পুলিশকে জনগণের সামনে নিজেকে সেভাবে তুলে ধরতে হবে। সেটাই আপনারা করবেন। জাতির পিতার এই নির্দেশ আপনারা মেনে চলবেন সেটাই আমি চাই।’
Leave A Reply

Your email address will not be published.