যে হাত দিয়ে আগুন দেবে, ওই হাত পুড়িয়ে দিতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

0 17,153

আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সবাই প্রস্তুত থাকবেন। মানুষের ক্ষতি যেন কেউ না করতে পারে। কেউ আগুন দিয়ে পোড়াতে এলে, যে হাত দিয়ে আগুন দেবে ওই হাতটা ওই আগুনে পুড়িয়ে দিতে হবে। আর বসে থাকার সময় নেই। কোনো ক্ষমা নেই।

বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে সব সহযোগী সংগঠনের যৌথসভায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন থেকে যৌথসভায় যুক্ত হন তিনি।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে সাজা বাস্তবায়ন করা হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারেক রহমান মুচলেকা দিয়ে গিয়েছিল, সে সাজাপ্রাপ্ত আসামি। আমি ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করবো, তাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনবো। ব্রিটিশ সরকারকে বলবো যে, তারেক সাজাপ্রাপ্ত আসামি তাকে হ্যান্ডওভার করতে হবে বাংলাদেশের কাছে। দেশে নিয়ে এসে আমি তার সাজা বাস্তবায়ন করবো।

জাতির পিতার খুনিদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর আহবান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমেরিকা খুনিদের পালতেছে, কানাডা আবার পালে আরেকটাকে, পাকিস্তানে আছে দুটা। সবার কাছে বলবো এই খুনিদের ফেরত পাঠাতে হবে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, অগ্নিসন্ত্রাসীদের এবং স্বাধীনতাবিরোধীদের আর ক্ষমতায় আসতে দেওয়া যাবে না, এটা পরিষ্কার কথা। ওরা আমাদের উৎখাত করবে? ওরা পকেট থেকে এসেছে আবার পকেটেই থাকবে।

প্রত্যেক এলাকায় নেতাকর্মীদের মাঠে থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জ্বালাও-পোড়াও, হত্যা-খুন, মানিলন্ডারিং এসবের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এর আগে বহু যন্ত্রণা দিয়েছে তারা। আমরা অনেক সহ্য করেছি। আমার কৃষক-শ্রমিক, আমাদের নেতাকর্মী কারও গায়ে হাত দিলে আর ক্ষমা নাই।

জামায়াতকে নিয়ে বিএনপি আবার ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশ পিছিয়ে যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের আর উন্নয়ন হবে না। তারা দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে। আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেবে না। কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে বসে থাকবে না আওয়ামী লীগ।

রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি-পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এ বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি আবারও বিশৃঙ্খলা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করেছে। রাস্তায় পুলিশের ওপর হামলা করছে। চাল-ডাল দিয়ে খিচুড়ি রান্না করে খেয়ে পুলিশের ওপর হামলা করে সরকার পতন করা যাবে না। সরকার পতন করা এতো সহজ নয়। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করা হলে আওয়ামী লীগ বসে থাকবে না।

তিনি আরও বলেন, বিএনপির ব্যবসা হোক বা আওয়ামী লীগের, সবাই কিন্তু শান্তিতে ব্যবসা করেছে। হাওয়া ভবন আমরা খুলি নাই বরং ব্যবসা করার সুযোগ করে দিয়েছি। আবারও হাওয়া ভবন আসলে, আরেকটা নাম দেবে। আবারও চুষে চুষে খাবে। শান্তিতে ব্যবসা করতে হবে না। আজ বিএনপিকে যারা তেল মারছে, আমরা তাদেরও হিসাব করবো।

আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসার রাজনীতি করে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনের পরপরই একেকজনে বাড়ি দখল করে রাতারাতি পুকুর কেটে কলাগাছের বাগান করেছে। মেয়েদের ওপর পাশবিক অত্যাচার করেছে। ছয় বছরের মেয়ে রজুফা থেকে শুরু করে ৬০ বছরের বৃদ্ধ পর্যন্ত তাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। সেই পূর্ণিমা-ফাহিমা থেকে শুরু করে সারা বাংলাদেশের কত নাম বলবো সবার চিকিৎসা করতে হয়েছে। অনেকে লজ্জায় নাম প্রকাশ করেনি।

হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে সরকারপ্রধান বলেন, সবার মনে রাখতে হবে আওয়ামী লীগ কারও পকেট থেকে আসে নাই, বরং জাতির পিতার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় এর অস্তিত্ব গভীরে প্রোথিত।

২০০১ সালের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালে তারা (বিএনপি) যে অত্যাচার আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর করেছে আমরা ২০০৯ এ ক্ষমতায় আসার পর গুণে গুণে সেই অত্যাচারের জবাব দিতে পারতাম, সেই ক্ষমতা আওয়ামী লীগ রাখে। কই আমরা তো তা করি নাই। আমরা তো তাদের ওপর এভাবে অত্যাচার নির্যাতন করতে যাইনি। সেই পঁচাত্তর থেকে ২১ বছর এবং এরপর ২০০১-২০০৮ পর্যন্ত শুধু মার খেয়েছি।

তিনি তারেক রহমানের উদ্দেশে বলেন, এতই নেতৃত্ব দেওয়ার যখন শখ, তখন দেশের বাইরে পালিয়ে থেকে কেন? ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি সেই সুযোগে ডিজিটালি কথা বলে।

২০০৮ সালের নির্বাচন প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি ভোট চুরি করেছিল বলেই ২০০৮ সালে জনগণ তাদের ভোট দেয়নি। জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করেছে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রেখেছে। আওয়ামী লীগ কখনো ভোট চুরি করে না, জনগণের ভোট সংরক্ষিত করে। তারা আওয়ামী লীগকে ভোট চুরির অপবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছিল কিন্তু পারেনি।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেবো না। দেশের মধ্যে কোনো বিশৃঙ্খলা করতে দেবো না।

বিএনপিকে আর কোনো ক্ষমা করা হবে না বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, তাদের কিসের ক্ষমা। বিএনপির নেতাকর্মীরা শান্তিতে ব্যবসা করছে, আওয়ামী লীগ কোনো বাধা দিচ্ছে না।

আওয়ামী লীগের যেসব নেতাকর্মী বিএনপির আমলে নির্যাতন মারধরের শিকার হয়েছে সেগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

গণমাধ্যমের উদ্দেশ্যে সরকারপ্রধান বলেন, যে সব মিডিয়া এখন বিএনপির কাছে ধর্না দিচ্ছে, এত টেলিভিশন, এ তো আমারই দেওয়া। আমি যদি উন্মুক্ত করে না দিতাম এত মানুষের চাকরিও হতো না এত মানুষ ব্যবসাও করতে পারতো না।

বিএনপির আমলে সাংবাদিক নির্যাতন করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই মিডিয়া একটা উল্টাপাল্টা লিখলেই তো মারতো। তারপরও এতো আল্লাদ কিসের, এত তেল মারা কিসের।

এসইউজে/জেডএইচ/জেআইএম jn

Leave A Reply

Your email address will not be published.