দেশে প্রচলিত আইন বাংলায় রূপান্তরে কমিটি

দেশে প্রচলিত সব মৌলিক আইন ইংরেজি ভাষা থেকে বাংলা ভাষায় রূপান্তরের মাধ্যমে সর্বসাধারণের পাঠ-উপযোগী করার উদ্যোগ নিতে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করেছেন হাইকোর্ট।

0 9,981

একইসঙ্গে দেশের সব আদালতে বাংলা ভাষা ব্যবহারের জন্য এসব আইনের নির্ভরযোগ্য পাঠ প্রকাশ করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে তা জানতে রুল জারি করেছেন আদালত।

রুলে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার, আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও বাংলা একাডেমির মহাপরিচালককে বিবাদী করা হয়েছে। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে তাদেরকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবীর করা এক রিটের শুনানিতে সোমবার (১৪ মার্চ) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবীরের সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

রিটকারী আইনজীবীদের একজন মোহাম্মদ শিশির মনির জানান, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল, বাংলা একাডেমি, আইন কমিশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইন অনুষদ ও বাংলা বিভাগের সমন্বয়ে এ কমিটি গঠন হয়েছে। তবে কতদিনের মধ্যে কমিটি প্রতিবেদন জমা দেবে সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা হয়নি।

প্রসঙ্গত, দেশে প্রচলিত সব মৌলিক আইন ইংরেজি ভাষা থেকে বাংলা ভাষায় রূপান্তরের মাধ্যমে সর্বসাধারণের পাঠ-উপযোগী করতে আইন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবীর পক্ষে মোহাম্মদ শিশির মনির এ লিগ্যাল নোটিশ পাঠান।

ওই রিটের ওপর রবি ও সোমবার টানা দুদিন শুনানি শেষে সোমবার কমিটি গঠন ও রুল জারিসহ এ আদেশ দেন আদালত।

নোটিশ পাঠানো ওই ১০ আইনজীবী হলেন- মোস্তাফিজুর রহমান, মীর ওসমান বিন নাসিম, মো. আসাদ উদ্দিন, মোহা. মুজাহিদুল ইসলাম, মো. জোবায়েদুর রহমান, মো. আব্দুস সবুর দেওয়ান, আল রেজা মো. আমির, আব্দুল্লাহ হিল মারুফ ফাহিম, জি এম মুজাহিদুর রহমান ও মো. জহিরুল ইসলাম।

নোটিশে বলা হয়, আদালতের সব ধরনের কার্যাবলি আইনের আলোকে পরিচালিত হয়। আদালতের কার্যক্রম সংক্রান্তে মৌলিক আইনগুলো- দণ্ডবিধি ১৮৬০, সাক্ষ্য আইন ১৯৭২, চুক্তি আইন ১৮৭২, সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন ১৮৭৭, সিভিল কোর্টস অ্যাক্ট ১৮৮৭, সম্পত্তি হস্তান্তর আইন ১৮৮২, ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮, দেওয়ানি কার্যবিধি ১৯০৮ এবং তামাদি আইন ১৯০৮।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট (আপিল বিভাগ) রুলস ১৯৮৮, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট (হাইকোর্ট বিভাগ) রুলস ১৯৭৩, ক্রিমিনাল রুলসের অর্ডারস ২০০৯, সিভিল রুলস রুলসের অর্ডারস। অধিকাংশ আইন ব্রিটিশ আমলে এবং ইংরেজি ভাষায় প্রণীত।

নোটিশে আরও বলা হয়, আদালতে ফৌজদারি এবং দেওয়ানি মামলার বিভিন্ন পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে এসব আইনের গুরুত্ব ও ব্যবহার সর্বাধিক। এ আইনগুলোর বাংলায় অনুদিত নির্ভরযোগ্য পাঠ প্রণয়ন ও প্রকাশ ব্যতীত আদালতের সর্বস্তরে বাংলা ভাষা ব্যবহারের আইনি বিধান সম্পূর্ণ অর্থহীন এবং অযৌক্তিক।

এখন পর্যন্ত এসব মৌলিক আইনের কোনো নির্ভরযোগ্য বাংলা পাঠ প্রণয়ন করা হয়নি। সর্বস্তরে বিশেষত আদালতে বাংলা ভাষা প্রচলনের স্বার্থে উক্ত মৌলিক আইনসমূহের বাংলায় অনুদিত নির্ভরযোগ্য পাঠ প্রকাশ অত্যাবশ্যক।

এমতাবস্থায় মৌলিক আইনগুলোর বাংলায় অনুদিত নির্ভরযোগ্য পাঠ (অথেনটিক টেক্সট) প্রকাশে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণে নোটিশে অনুরোধ জানানো হয়।

ইংরেজি আইনগুলোর বাংলা পাঠ প্রচলনে নোটিশগ্রহীতারা কী উদ্যোগ নিয়েছেন- তা সাতদিনের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে। অন্যথায় আইন ও সংবিধান অনুসারে এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ হিসেবে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হবে বলেও নোটিশে জানানো হয়।

Leave A Reply

Your email address will not be published.