গ্রামীণ টেলিকম ৩ হাজার ৯ কোটি টাকা পাচার করেছে: রাষ্ট্রপক্ষ
গ্রামীণ টেলিকমের মামলা জিততে লবিস্ট নিয়োগ করেছিলেন ড. ইউনূস এমন তথ্য হাইকোর্টকে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, গ্রামীণ টেলিকম থেকে ৩ হাজার ৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা পাচার হয়েছে।
গ্রামীণ টেলিকমের অর্থ অন্য কোথাও পাচার হয়েছে কি না, তা তদন্ত করতে দুদক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ নিয়ে প্রয়োজনে আইনজীবীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে দুদক, জানান আদালত। এ ছাড়াও টাকা দিয়ে শ্রমিকদের মামলা দফারফা করা হয়েছে কি না, তা-ও তদন্তের আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এদিন আদালতকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মেহেদী হাসান জানান, গ্রামীণ টেলিকম মামলা জিততে লবিস্ট নিয়োগ করা করেছিল। আর প্রতিষ্ঠানটির হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি ধামাচাপা দিতেই টাকা দিয়ে মামলা আপস করা হয়েছে।
অন্যদিকে আইনজীবী ইউসুফ আলী মামলার ফি বাবদ যে ১৬ কোটি টাকা নিয়েছেন তার বিস্তারিত তথ্য আদালতকে জানিয়েছেন তার আইনজীবী আহসানুক করীম।
তিনি আদালতকে বলেন, প্রয়োজনে ১৬ কোটি টাকা ফি নেয়ার বিষয়ে দুদক আইনজীবী ইউসুফ আলীকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবেন।
এর আগে গত মঙ্গলবার (২ আগস্ট) ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিকদের সমঝোতার বিষয়ে অনৈতিক কিছু হয়েছে কি না, তা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দেখবে বলে মন্তব্য করেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে ১২ কোটি নয়; বরং ১৬ কোটি টাকা ফি নিয়েছেন বলে আদালতে জানান আইনজীবী ইউসুফ আলী।
গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিকদের কাছ থেকে ১৬ কোটি টাকা ফি নেয়ার কথা প্রতিবেদন আকারে হাইকোর্টে জানান আইনজীবী ইউসুফ আলী। প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রেড ইউনিয়নের অ্যাকাউন্টে ২৬ কোটি টাকা জমা হলেও অবশিষ্ট ১০ কোটি টাকা রয়েছে ইউনিয়নের কাছেই।
আইনজীবী ইউসুফ আলী আরও বলেন, ড. ইউনূস ও গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিকদের সমঝোতা বিষয়ে অনৈতিক কিছু হয়েছে কি না তা দুদক দেখবে বলেও জানান আদালত।
এর আগে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে করা মামলায় ১২ কোটি টাকার বিনিময়ে সমঝোতার অভিযোগে আইনজীবী ইউসুফ আলীর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়।
এদিকে সোমবার (১ আগস্ট) মানি লন্ডারিংসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ গ্রামীণ টেলিকমের পরিচালনা পর্ষদের ৪ জনের বিরুদ্ধে তিন সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি করে দুদক।
গত ২৮ জুলাই দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের জানান, চার অভিযোগে গ্রামীণ টেলিকমের পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে কমিশন।
অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে- কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টনের জন্য সংরক্ষিত লভ্যাংশের ৫ শতাংশ অর্থ লোপাট, কোম্পানি থেকে ২ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা পাচারের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরে মাধ্যমে আত্মসাৎ প্রভৃতি।
এ ছাড়া গত ২৫ জুলাই ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আদালতের মামলার শুনানি আবার পেছানো হয়। পরবর্তী দিন ধার্য করা হয় ১১ আগস্ট। বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এদিন ঠিক করেন। এর আগে গত ৬ জুন ড. ইউনূসের মামলা ২ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।
২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করে ঢাকার কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদফতর।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদফতরের কর্মকর্তারা গ্রামীণ টেলিকম পরিদর্শনে যান। সেখানে গিয়ে তারা শ্রম আইনের কিছু লঙ্ঘন দেখতে পান। এর মধ্যে ১০১ শ্রমিক-কর্মচারীকে স্থায়ী করার কথা থাকলেও তাদের স্থায়ী না করা। শ্রমিকদের অংশগ্রহণের তহবিল ও কল্যাণ তহবিল গঠন না করা।
এ ছাড়া কোম্পানির লভ্যাংশের ৫ শতাংশ শ্রমিকদের দেয়ার কথা থাকলেও তা তাদের দেয়া হয়নি।