ঈদযাত্রার প্রথম দিনে ট্রেনে শিডিউল বিপর্যয়, ভোগান্তি
মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে গত দুই বছর আনন্দঘন পরিবেশে অনেকেই ঈদ করতে পারেনি। কিন্তু এবার করোনার সংক্রমণ কম থাকায় গ্রামের বাড়িতে ঈদ করার উদ্দেশে আগে থেকেই ঢাকা ছাড়ছেন অনেকেই। এ জন্য বুধবার (২৭ এপ্রিল) সকাল থেকে কমলাপুর স্টেশনে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়।
তবে, রেলওয়ের ঈদযাত্রা শুরুর দিনেই নির্ধারিত সময়ে ছাড়তে পারেনি ডজন খানেক ট্রেন; ফলে দিনভর ভুগতে হয়েছে যাত্রীদের।
এবার ঈদ উপলক্ষ্যে ২৭ এপ্রিলের টিকিট বিক্রির মধ্য দিয়ে ঢাকা থেকে ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছিল। সে অনুযায়ী, বুধবারকে ট্রেনের ঈদযাত্রা শুরুর দিন ধরা হচ্ছে।
ঢাকা থেকে সারাদেশের বিভিন্ন গন্তব্যের সব ট্রেন কমলাপুর স্টেশন থেকে ছাড়ে। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ডজন খানেক ট্রেনের যাত্রা শুরুতে দেরি দেখা গেলেও কোনোটির যাত্রা এক ঘণ্টার বেশি বিলম্বিত হয়নি।
বুধবার (২৭ এপ্রিল) ভোর সাড়ে ৬টায় রাজশাহীগামী ‘ধূমকেতু এক্সপ্রেসে’র মাধ্যমে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেনে ঈদযাত্রা শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে সেটি না হওয়ায় পরের ট্রেন সিলেটগামী ‘পারাবত এক্সপ্রেসে’র মাধ্যমে ৬টা ২০ মিনিটে যাত্রা শুরু হয়।
আর এর আগেই সকাল ৬টা ২০ মিনিটে সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেস স্টেশন ছেড়ে যাওয়ায় সেটি হয়ে যায় ঈদযাত্রার প্রথম ট্রেন।
পারাবত এক্সপ্রেস ছেড়ে যাওয়ার পর সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে ছাড়ার কথা ছিল চিলাহাটিগামী নীলসাগর এক্সপ্রেসের। ট্রেনটি ছাড়ে সকাল ৭টার পর।
সকাল ৭টার পর চট্টগ্রাম অভিমুখী সোনার বাংলা এক্সপ্রেস প্লাটফর্ম থেকে ছেড়ে গেছে।
সকাল ৭টায় ছাড়ার কথা থাকলেও তখনও প্লাটফর্মে অবস্থান করতে দেখা যায় কিশোরগঞ্জগামী এগারসিন্দুর প্রভাতী, দেওয়ানগঞ্জ অভিমুখী তিস্তা এক্সপ্রেস ও চট্টগ্রাম অভিমুখী মহানগর প্রভাতী এক্সপ্রেসকে।
খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেসের ৮টা ১৫ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও আধা ঘণ্টা দেরিতে ৮টা ৪৫ মিনিটে ট্রেনটি কমলাপুর ছাড়ে। রংপুর এক্সপ্রেসের ৯টা ১০ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও তা ছেড়ে যায় সাড়ে ১০টায়।
ট্রেনগুলো দেরিতে ছাড়ায় গরমে ভিড়ে যাত্রীদের হাঁসফাঁস করতে দেখা যায়।
কমলাপুরের স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার সাংবাদিকদের বলেন, সকাল থেকে যে ট্রেনগুলো ছেড়ে গেছে, এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের দিকে তিনটি ট্রেন একটু বিলম্বে ছেড়েছে। ট্রেনগুলোর লাইন জয়দেবপুর থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত, সবগুলো সিঙ্গেল লাইন। সেখানে যতগুলো স্টেশন আছে, একটা স্টেশন থেকে আরেকটা স্টেশনের দূরত্ব অনেক বেশি। যার কারণে ক্রসিং এবং ডিফারেন্সের কারণে যে অ্যারেঞ্জমেন্টগুলো, সেগুলো একটু দেরি।
তিনি বলেন, একটা স্টেশন থেকে আরেকটা স্টেশনের দূরত্ব ২৩ কিলোমিটার। এই ২৩ কিলোমিটারের লাইনে একটা ট্রেন না গেলে আরেকটা ট্রেন আসতে পারে না, যেতেও পারে না।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, কাউন্টার থেকে এক ব্যক্তি চারজনের টিকিট কাটতে পারছেন। তবে তার জন্য প্রত্যেক যাত্রীর জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি দিতে হচ্ছে। ঈদ উপলক্ষ্যে আগে বিভিন্ন সময় টিকিট কালোবাজারির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ জন্য এবার কালোবাজারি বন্ধে টিকিট কেনার সময় যাত্রীদের জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন সনদের ফটোকপি কাউন্টারে দেখাতে হচ্ছে।
এবার ঢাকার কমলাপুর স্টেশনসহ পাঁচটি স্থানে অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। তবে ঈদযাত্রার প্রতিটি ট্রেনে নারী ও প্রতিবন্ধী যাত্রীদের জন্য একটি করে আলাদা কোচ সংযোজন করা হচ্ছে।
রেলওয়ে সূত্র আরও জানায়, ঈদ উপলক্ষ্যে ছয়টি বিশেষ ট্রেন চলবে। এগুলো হচ্ছে- চাঁদপুর স্পেশাল দুই জোড়া, দেওয়ানগঞ্জ স্পেশাল এক জোড়া, শোলাকিয়া স্পেশাল দুই জোড়া, খুলনা স্পেশাল এক জোড়া। এসব ট্রেনের টিকিট অনলাইনে বিক্রি করা হবে না।
গত ২৩ এপ্রিল থেকে ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু হয় যা চলবে আজ ২৭ তারিখ পর্যন্ত।
এবারের ঈদযাত্রায় প্রতিদিন ৫৩ হাজার যাত্রী ট্রেনে যাতায়াত করবেন। এর মধ্যে শুধুমাত্র আন্তঃনগর ট্রেনে আসন থাকবে ২৭ হাজারের বেশি।