বাঙালির জাতীয় পরিচয় নির্মাণে কাজী নজরুল ইসলামের অবদান অনস্বীকার্য

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাঙালির জাতীয় পরিচয় নির্মাণে কাজী নজরুল ইসলামের অবদান অনস্বীকার্য। তিনি বলেন, ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে পাকিস্তানি দখলদারদের থেকে মুক্তির দীর্ঘ স্বাধিকার সংগ্রামে কাজী নজরুল ইসলামের তেজোদ্দীপ্ত কবিতা, গান ও সাহিত্য আমাদের অনুপ্রেরণা দিয়েছে। পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে একটি স্বতন্ত্র জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার পথ নির্দেশ করেছে।

0 11,076

প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার (১১ মার্চ) নজরুল উৎসব উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) দেওয়া এক বাণীতে এ কথা বলেন।

তিনি শুক্রবার এবং শনিবার দুই দিনব্যাপী নজরুল উৎসবের আয়োজন হচ্ছে জেনে সন্তোষ প্রকাশ করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাগরণের কবি নজরুল ইসলামের দর্শন দ্বারা ভীষণভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার অবিসংবাদিত নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর তার স্বীয় উদ্যোগে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবির মর্যাদা প্রদান করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু তাই নয়, তিনি কবি রচিত ‘চল্ চল্ চল্, উর্ধ্ব গগণে বাজে মাদল’ গানটিকে বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর রণসঙ্গীত হিসেবে নির্ধারণ করেন। কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে ১৯৭২ সালের ২৫ মে কবির ৭৩তম জন্মদিন পালনের উদ্দেশ্যে ২৪ মে তাকে রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে সপরিবারে ঢাকায় নিয়ে এসে নাগরিকত্ব প্রদান করেন এবং তার জন্য সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। ১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এক বিশেষ সমাবর্তনের মাধ্যমে কবিকে ডিলিট উপাধি প্রদান করে।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালের জুলাই মাসে কবির স্বাস্থ্যের অবনতি হলে রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান তাকে তৎকালীন পিজি হাসপাতাল বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। এরই মধ্যে স্বাধীনতা বিরোধী চক্র ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে। কবিও হাসপাতাল থেকে আর বাড়ি ফিরতে পারেননি। ১৯৭৬ সালের আগস্ট মাসেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তিনি বলেন, আমাদের জাতীয় কবির কণ্ঠস্বর ’৪০-এর দশকেই চিরতরে রুদ্ধ হয়ে যায়। তবে ততদিনে তিনি আমাদের জন্য রেখে যান অজস্র গান, কবিতা ও নানান অগ্নিঝরা রচনার অমূল্য সাহিত্য সম্ভার। নিপীড়িত মানুষের বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে ধর্মমত নির্বিশেষে সকল বাঙালি মিলেমিশে সাম্য প্রতিষ্ঠিত করে এক নতুন সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন কবি। সেটাই ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ‘সোনার বাংলাদেশ’-এর ভিত্তি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জাতির পিতার আদর্শকে ধারণ করে দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর আমরা কুমিল্লায় একটি নজরুল ইনস্টিটিউট কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছি। আমাদের সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বরাদ্দকৃত কবি ভবনে প্রতিষ্ঠিত কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের জন্য ২টি বেজমেন্টসহ ৯তলা নতুন ভবন নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করেছে। সম্প্রতি, ‘জয় বাংলা’ কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে গ্রহণ করেছি- তাও প্রথম উঠে এসেছিল আমাদের জাতীয় কবির প্রবন্ধে ও কবিতায়। আজ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম কিংবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কেউই আমাদের মাঝে নেই। রয়ে গেছে তাদের স্বপ্ন। আমরা সেটাকে বাস্তবে পরিণত করবার পবিত্র ব্রত গ্রহণ করলেই তাদের প্রতি যথার্থ সম্মান দেখানো হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি জেনে অত্যন্ত খুশি হয়েছেন নজরুল উৎসব আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদ্যোক্তাগণ নজরুলের সামগ্রিক শিল্পসৃষ্টি শুদ্ধরূপে ধারণ, রক্ষণ ও পরবর্তী প্রজন্মকে এই অমূল্য সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার সম্বন্ধে সচেতন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তাদের এই মহৎ প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, আমি নিশ্চিত যে আমাদের জাতীয় কবির গভীর মানবিকতা, অসাম্প্রদায়িক চেতনা, শোষণবিরোধী সোচ্চার কণ্ঠস্বর আমাদের আত্মমর্যাদাশীল ও উন্নত-সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের স্বপ্ন বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। এই উৎসব আয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সাধুবাদ জানান এবং এর সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
Leave A Reply

Your email address will not be published.