‘আমারও তো একটা ভাই ছিল, কিন্তু সে আজ কোথায়’

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর হাতে নিহত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের জন্মদিন আজ। এদিকে তার জন্মদিন উপলক্ষে আবরারের ছোট ভাই ফাইয়াজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

0 15,817

শুক্রবার রাত ১২টার দিকে ফাইয়াজের ফেসবুক আইডি থেকে দেওয়া স্ট্যাটাসটিতে রয়েছে ‘আজ ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২। ভাইয়ার ২৪তম জন্মদিন। বেঁচে থাকলে ২৫ বছরে পা দিত। কিন্তু দুই বছর ৪ মাস হলো ভাইয়া আর আমাদের মাঝে নেই। আমি কখনো দেখিনি আমাদের বাসায় ভাইয়ার জন্মদিন সেভাবে পালন করা হয়েছে। আব্বু থাকত না, আম্মু একাই আমাদের নিয়ে থাকতেন। স্পেশাল কিছু রান্না করতেন আর এতেই দিনটা চলে যেত। ভাইয়াকে হয়তো দু-একবার উইশ করেছি।

 
তিনি আরও লিখেন, ‘এর বেশি আর কিছু না। কিন্তু এখন এই দিনটাকে ঘিরে যে তীব্র শূন্যতা অনুভব হয়, সেটি ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। বেশ অনেকটা সময় পার হয়ে গেছে। দুই মাস আগে রায়ও হয়েছে। আসামিরা আপিল করেছে। কিন্তু এ দেশের উচ্চ আদালতে মামলার গতিপ্রকৃতি যে কেমন হবে, সেটি শুধু আল্লাহ জানেন। কেউ হয়তো একদম ভুলে যাবে না ভাইয়াকে, কিন্তু নিজের জীবনের ব্যস্ততায় যে কোনো কিছুই একসময় মনের গভীরে চাপা পড়ে যায়, যাবে। মাঝেমধ্যে অনেককে বড় ভাইদের সঙ্গে দেখে মনে হয়, হায় রে! আমারও তো একটা ভাই ছিল। কিন্তু সে আজ কোথায়!’
 
ফাইয়াজ লিখেছেন, ‘আম্মু-আব্বুর মনের অবস্থা কী আল্লাহই ভালো জানেন। বাকিটা জীবন ভাইয়ার স্মৃতি মনের মধ্যে আগলে রাখা আর আল্লাহর কাছে ওর জন্য দোয়া করতেই হয়তো কাটবে তাদের। অবশ্য আর কিছু করারও নেই। আপনারাও দোয়া করবেন ভাইয়ার জন্য।’
 
 
২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বিভিন্ন চুক্তি নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন আবরার ফাহাদ। এর জের ধরে পরদিন ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের আবাসিক ছাত্র ও তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরারকে তার কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে যায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন উচ্ছৃঙ্খল নেতাকর্মী। 
 
তারা আবরারের ১০১১ নম্বর রুমে গিয়ে রাতে তাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তার ল্যাপটপ, দুটি মোবাইল ফোনসহ ২০১১ নম্বর রুমে নিয়ে আসে। এরপর ওই কক্ষে আবরারকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের সিঁড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনার পরদিন ৭ অক্টোবর চকবাজার থানায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন।
 
গত বছরের ৮ ডিসেম্বর এই মামলায় রায় দেন বিচারিক আদালত। রায়ে ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান এ রায় দেন।
 
মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামিরা হলেন- মেহেদী হাসান রাসেল, মো. অনিক সরকার, মেহেদী হাসান রবিন, ইফতি মোশাররফ সকাল, মো. মনিরুজ্জামান মনির, মো. মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, মো. মাজেদুর রহমান মাজেদ, মো. মুজাহিদুর রহমান, খন্দকার তাবাককারুল ইসলাম তানভীর, হোসাইন মোহাম্মদ তোহা, মো. শামীম বিল্লাহ, এ এস এম নাজমুস সাদাত, মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম, মুনতাসির আল জেমি, মো. শামসুল আরেফিন রাফাত, মো. মিজানুর রহমান, এস এম মাহমুদ সেতু, মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মুজতবা রাফিদ। তাদের মধ্যে মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মুজতবা রাফিদ পলাতক রয়েছেন।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় মুহতাসিম ফুয়াদ হোসেন, মো. আকাশ হোসেন, মুয়াজ আবু হুরায়রা, অমিত সাহা ও ইশতিয়াক আহমেদ মুন্নার।
Leave A Reply

Your email address will not be published.