বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে প্রস্তুত জাতীয় স্মৃতিসৌধ

0 769

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আত্মত্যাগী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ইতিহাসের সর্বোচ্চ সম্মান জানাতে প্রস্তুত সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ। বিজয় উদযাপনের একদিন আগেই এবার ১৫ ডিসেম্বর জাতির বীর সন্তানদের শ্রদ্ধা জানানোর কথা রয়েছে মুক্তিযুদ্ধকালীন বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারতের রাষ্ট্রপ্রতির। এ কারণে প্রায় এক মাস ধরেই পরিষ্কার, পরিচ্ছন্নতাসহ লাল-সবুজের আভায় সৌধ চত্বরকে সাজিয়েছে গণপূর্ত বিভাগ। এ উপলক্ষে নজিরবিহীন নিরাপত্তা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

 

নবম পদাতিক ডিভিশনের কমান্ডিংয়ে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে তিন বাহিনীর সদস্যরা শেষ মুহূর্তে তাদের সশস্ত্র মহড়া ঝালিয়ে নিচ্ছেন। বিউগলের সুরের মূর্ছনায় স্বাধীনতা সংগ্রামে শাহাদতবরণকারী শহীদদের শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদনের জন্য সর্বশেষ প্রস্তুতিও চলছে। এ ছাড়া প্রস্তুতিমূলক কুচকাওয়াজ ও মোটরসাইকেল মহড়ায় ব্যস্ত সময় কাটছে সশস্ত্র তিন বাহিনীর সদস্যদের।

বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী। সৌধচত্বর পরিণত হয়েছে লাল-সবুজের এক টুকরো বাংলাদেশে। সবকটা জানালা খুলে দে না, ওরা আসবে চুপিচুপি। তাইতো প্রধান ফটক থেকে সৌধ বেদি পর্যন্ত লাল ইটের হেরিবন্ডগুলো সাদা রঙের আভায় পবিত্র করে তোলা হয়েছে। ৮৪ একর এলাকা জুড়েই সবুজ বৃক্ষরাজি, লাল ইটের প্রাচীর ও কনক্রিটে ঘেরা সৌধ চত্বরের বিভিন্ন জায়গায় শোভা পাচ্ছে বাহারি রঙিন ফুল। সৌরভ ছড়াচ্ছে পুরো সৌধ চত্বরে।
এর আগে গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধানে ও পরিচ্ছন্নকর্মীদের নিরলস পরিশ্রমে সৌধ মিনার, শহীদ বেদি, হ্যালিপ্যাডসহ সড়ক গুলো ধুয়েমুছে পরিষ্কার করা হয়েছে। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ফুল গাছের টবগুলো স্থানান্তরের মাধ্যমে সৌধ এলাকাকে দৃষ্টিনন্দন করার চেষ্টা করছেন মালিরা। নিরাপত্তা জোরদার ও আলোকসজ্জার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগরি কাজে নিয়োজিতরা।
পরিচ্ছন্নতাকর্মী, মালি, চিত্রকর ও ইলেকট্রেশিয়ানরা জানান, বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শ্রদ্ধা জানাবেন। এ ছাড়া দেশ-বিদেশ থেকে লোকজন স্মৃতিসৌধে আসবেন ওই দিন। এ জন্য প্রতিবছরের মতো এবারও প্রায় এক মাস ধরে পুরো সৌধ এলাকা সুসজ্জিত করে তুলেছেন। গাছের পাতা থেকে শুরু করে অন্যান্য ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করছেন। পুরো সৌধ এলাকা লাল-সবুজের আভায় সাজিয়ে তোলা হয়েছে। ফুল গাছের চারা লাগানো হয়েছে নির্ধারিত স্থান গুলোতে। লেকের পানি পরিষ্কার করে সেখানে লাল শাপলা লাগানো হচ্ছে। প্রধান ফটক থেকে শহীদ বেদি পর্যন্ত হাঁটার পথগুলো সাদা রঙে শুভ্র করে তোলা হয়েছে। এ ছাড়া পুরো সৌধ এলাকায় আলোকবাতি স্থাপনসহ লাল-সবুজ আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে।
 
গণপূর্ত বিভাগের সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধের উপসহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে প্রায় বিগত দুই মাস ধরে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু হয়েছে। ফুল দিয়ে সাজানো, লেক সংস্কার, সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ সব কাজ পুরোপুরি শেষ। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রস্তুত আছে।
তবে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ১৫ ডিসেম্বর ভারতের মহামান্য রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশে আসবেন। আমরা আশা করছি ওই দিনই দুপুরে শহীদদের সম্মানে উনি পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। যেহেতু ১৬ ডিসেম্বর প্রস্তুতির সঙ্গে এ জন্য দুই দিন আগেই আমরা সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। আর এ কারণে গত ১ ডিসেম্বর থেকেই পুরো সৌধ এলাকায় সিকিউরিটি ডেপ্লয় হয়েছে। বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিজয় উদযাপন নির্বিঘ্ন করতে কাজ করে যাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত আজ থেকে ৪৯ বছর পূর্বে সাভারের পাথালিয়া, টাটীবাড়ী, কুরগাঁওসহ তিনটি মৌজা নিয়ে ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর (১ পৌষ, ১৩৭৯) জাতীয় স্মৃতিসৌধের শিলাবিন্যাস করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
Leave A Reply

Your email address will not be published.