সাকিব একা লড়লেন, বাকিরা কেন পারলেন না?

0 16,027

তিনি দলের সঙ্গে থাকুন আর নাই থাকুন। অন্য সব ক্রিকেটারদের সাথে, ভিনদেশি ক্রিকেটারদের অধীনে একত্রে অনুশীলন করুন আর নাই করুন, মাঠে নিজেকে ফিরে পেতে একদমই সময় লাগে না সাকিব আল হাসানের।

অতীতেও বহুবার দেখা গেছে ইনজুরি কাটিয়ে কিংবা দেশের বাইরে ছুটি কাটিয়ে এসে হাতে গোনা কয়েক দিনের প্রস্তুতিতে খেলতে নেমেই ব্যাট ও বল হাতে ঠিকই দূর্বার সাকিব।

এবার নিউজিল্যান্ডের ত্রিদেশীয় সিরিজেও তাই। মাঠে ফিরে নিজেকে ফিরে পেতে সময় লাগলো না সাকিব আল হাসানের। অবশ্য এবার খেলার মধ্যেই ছিলেন। সবে ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (সিপিএল) খেলে এসেছেন।

তারপরও ২৮ সেপ্টেম্বর সিপিএলে শেষ ম্যাচ খেলে চলে গিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে পরিবারের সাথে সময় কাটাতে। সেখান থেকে দেরি করে আসায় ভ্রমণ ক্লান্তির কারণে প্রথম ম্যাচ খেলতে পারেননি। গত ম্যাচে সেভাবে নিজেকে মেলে ধরা সম্ভব হয়নি; কিন্তু আজ নিজের দ্বিতীয় ম্যাচেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাট হাতে স্বরুপে সাকিব। বুধবার ক্রাইস্টচার্চে ঠিক জ্বলে উঠেছে বাংলাদেশ ক্যাপ্টেনের ব্যাট।

দল জেতাতে না পারলেও সাকিব একাই লড়াই করেছেন। দেখিয়ে দিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের মাটিতে কিউই ধারালো বোলিংয়ের বিপক্ষে কিভাবে মাথা তুলে দাঁড়াতে হয়। ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদি আর অ্যাডাম মিলনের মত ফাস্ট বোলারদের বিপক্ষে সাহস নিয়ে খেললে উইকেটের চারদিকে শটস খেলা সম্ভব, লেগস্পিন গুগলি বোলার ইশা সোধি আর অফস্পিনার ব্রেসওয়েলকেও তেমন সমীহের কিছু নেই। দেখে খেললে তাদের স্পিনকেও স্বচ্ছন্দে মোকাবিলা করা যায়- সব চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন সাকিব।

লক্ষ্যটা কঠিন ছিল। জিততে দরকার ছিল ২০৯ রানের। ওভার পিছু প্রায় ১১ রানের কঠিন টার্গেট তাড়া করে জেতা ছিল রীতিমত চ্যালেঞ্জিং। এমন বড় লক্ষ্য ছঁতে দরকার পার্টনারশিপ। আর হাতে উইকেট রেখে খেলা।

তার কোনটাই হয়নি। পুরো ম্যাচে একটি বড় পার্টনারশিপও হয়নি। বিশেষ করে ১০ ওভার পরে প্রায় নিয়মিত বিরতিতে উইকেটের পতন ঘটেছে। এর মধ্যে সৌম্য সরকারের সামনে সুযোগ ছিল অধিনায়কের সঙ্গে উইকেটে থেকে দলের অবস্থা মজবুত করার।

তৃতীয় উইকেটে সাকিব আর সৌম্য খেলছিলেন আস্থার সঙ্গে। রানও উঠছিল মোটামুটি; কিন্তু ট্রেন্ট বোল্টের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে শর্ট বলে থার্ডম্যানে গলাতে গিয়ে সীমানার ৫ গজ আগে ক্যাচ দিয়ে সে সম্ভাবনার জাল নিজেই ছিঁড়ে ফেলেন সৌম্য (১৭ বলে ২৩)।

৪.৩ ওভারে ৪৩ রানের জুটি ভাঙ্গার পরই বদলে যায় ইনিংসের চেহারা। এরপর সহঅধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান ও ইয়াসির আলী রাব্বির সামনে সুযোগ ছিল অধিনায়কের সঙ্গে হাত মিলিয়ে জুটি গড়ার। তাতে রানের চাকা সচল হতো। পাশাপাশি ম্যাচও ক্লোজ হতে পারতো।
কিন্তু তারা কেউই সে কাজটি করতে পারেননি। অধিনায়ক সাকিব একদিকে ইচ্ছেমত যাকে তাকে এদিক-ওদিক দিয়ে বিগ শট খেলে প্রায় ওভারে বাউন্ডারি হাঁকাচ্ছেন। এটা দেখার পরও আফিফ (৪ বলে ৪), সোহান (৬ বলে ২) আর ইয়াসির আলী রাব্বি (৬ বলে ৬) খুব অল্প সময়েই বিগ শট নিতে গিয়ে আউট হয়েছেন।

তারা সাকিবকে আরও বেশি স্ট্রাইক দিয়ে খেললে বরং দলের উপকার হতো। এরমধ্যে অফস্পিনার ব্রেসওয়েলকে একটু হালকা মেজাজে খেলতে গিয়ে লাইন মিস করে বোল্ড হন আফিফ। আর সোহান ফেরেন মিলনের ওভার পিচ ধরনের বলকে ডিপ মিডউইকেটের ওপর দিয়ে তুলে মারতে গিয়ে।

লেগি সোধিকে স্পিনের বিপক্ষে অনসাইডে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে সীমানার ওপরে ক্যাচ দেন ইয়াসির আলী। প্রতিষ্ঠিত উইলোবাজদের কারো কাছ থেকে সাহায্য-সহযোগিতা না পাওয়ায় সাকিবের একার লড়াইটি আলোর মুখ দেখেনি। অন্তত একজন ৩০ প্লাস রানের একটি ইনিংস খেলে পার্টনারশিপ তৈরি করতে পারলে সাকিব হয়তো আরও ফ্রি হয়ে খেলতে পারতেন।

তাতে ম্যাচ নিশ্চয়ই আরও ক্লোজ হতো; কিন্তু বরাবরের মতই সঙ্গীরা সবাই ব্যর্থতার মিছিলে অংশ নিলেন। তাদের লক্ষ্য ও বলগাহীন ব্যাটিং আবার সেই প্রশ্নটাই বড় হয়ে দেখা দিল, তাকে নিয়ে যত কথা আর সমালোচনাই হোক না কেন, সাকিবতো মাঠে নিজের কাজটা ঠিক করে দেখান।

কারণ বড় মঞ্চে পারফরম করার শক্তি ও সাহস দুইই আছে তার। পাশাপাশি জায়গামত জ্বলে ওঠার জন্য ভেতরে জোর তাগিদও অনুভব করেন সাকিব।

ব্যাট ও বল হাতে জ্বলে ওঠার সংকল্পটাও অনেক দৃঢ়। সেখানে অন্যরা? বাকিরা তো সারা বছর ভিনদেশি কোচিং স্টাফের অধীনে সুবোধ বালকের মত অনুশীলন করেন; কিন্তু পারেন না। আর পারলেও কালে-ভদ্রে। এটা কি মেধায় ঘাটতি? নাকি জায়গামত পারফরম করার সাহস, উদ্যম আর দৃঢ় সংকল্পে কমতি?

এআরবি/আইএইচএস JN

Leave A Reply

Your email address will not be published.