ফর্মহীন তবু নেই বিকল্প, ভাঙবে তো অটোচয়েজ প্রথা?

ক্রিকেট মহলে অফফর্মে থাকা তারকাদের বাদ না পড়ার পেছনে অকাট্য এক যুক্তি, বিকল্প নেই!। জাতীয় দলে বিভিন্ন পজিশনে বেশ কয়েকজন তারকা অটোচয়েজ হয়ে আছেন দীর্ঘদিন। আশানুরূপ পারফরম্যান্স দেখাতে না পারলেও দলে তাদের জায়গা প্রশ্নবিদ্ধ হয় না 'বিকল্প নেই' সূত্র মেনে। টানা বাজে পারফরম্যান্সের পর জিম্বাবুয়ে সফরে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট নিয়ে নড়েচড়ে বসার ইঙ্গিত দিলেও বোর্ড স্থির থাকতে পারেনি নিজেদের সিদ্ধান্তে। এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে পরাজয়ের পর 'অটোচয়েজ প্রথা' ভাঙার কথা বলেছেন টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন।

0 8,761

১১৯.৬৮ গড় ও ১১৫.১৬; ১৭ বছরের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে ১০১ ম্যাচ খেলার পর বাংলাদেশ ক্রিকেটের মিস্টার ডিপেন্ডেবল খ্যাত মুশফিকুর রহিমের গড় ও স্ট্রাইকরেট এমনই সাদামাটা। চার-ছক্কার ক্রিকেটে ১০০-এর বেশি ম্যাচ খেলে চার মেরেছেন ১২৬টি আর ছক্কা মাত্র ৩৭টি। পাওয়ার ক্রিকেটে বাংলাদেশের ব্যর্থতার চিত্রটা চাইলে মুশফিকের পরিসংখ্যান দেখেই বুঝে নেওয়া যায়।

ইনিংস বড় করতেও ব্যর্থ বাংলাদেশের অন্যতম এই বড় তারকা। টি-টোয়েন্টিতে মিডল অর্ডারে সবসময় বড় ইনিংস খেলার সুযোগ হয়তো আসে না, তারপরও পাওয়া সুযোগ খুব কম সময়ই কাজে লাগাতে পেরেছেন এই উইকেটকিপার ব্যাটার। ১০১ ম্যাচের ৯২ ইনিংসে ব্যাট করে মাত্র ৬টি ইনিংসকেই ৫০ বা তার চেয়ে বেশি রানের ইনিংসে রূপ দিতে পেরেছেন তিনি। প্রথম হাফ সেঞ্চুরি পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ছয় বছর! শেষটি গত বছর বিশ্বকাপে।

আর সাম্প্রতিক সময়ে তো আরও বাজে অবস্থা তার। গত তিন বছরে গড়টা নেমে এসেছে ১৬ এর ঘরে। আর স্ট্রাইকরেট মাত্র ৯৬!

সম্প্রতি জাতীয় দলের কোচ রাসেল ডমিঙ্গো মুশফিকের টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে খেলা নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেন। তিনি জানিয়েছিলেন, মুশফিক টি-টোয়েন্টি খেলায় চাপ পড়ছে ওয়ানডে ও টেস্টের পারফরম্যান্সে। কিন্তু এমন সাদামাটা পারফরম্যান্সের পরও এই ফরম্যাটে মুশি খেলে যাচ্ছেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে।

টাইগারদের স্কোয়াডে অটোচয়েজ তারকাদের অন্যদের অবস্থাও খুব একটা সুবিধার নয়। সাবেক অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়েই সমালোচনাটা একটু বেশি হচ্ছে ইদানীং। বয়সের ভারে রিফ্লেক্স কমে এসেছে অনেক। রানিং বিটুইন দ্য উইকেটে তো দুর্বলতা দৃষ্টিকটু হয়ে যায় প্রায়ই। ব্যাট হাতে বলের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছেন না মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তারপরও অটোচয়েজ হিসেবে খেলছেন এশিয়া কাপের স্কোয়াডে। বিকল্প না থাকায় একাদশে জায়গাটা পাকা হয়তো বিশ্বকাপেও।

লোয়ার মিডল অর্ডারে ফিনিশারের ভূমিকায় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের কার্যকরিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যায় তার স্ট্রাইকরেটের কারণেই। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চতুর্থ সর্বোচ্চ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এই তারকা রান করেছেন ১১৭.২৩ স্ট্রাইকরেটে। অথচ আধুনিক ক্রিকেটে ওয়ানডে ম্যাচেও লোয়ার মিডল অর্ডারে এর চেয়ে বেশি স্ট্রাইকরেটে রান দাবি করে বড় দলগুলো।

সবশেষ ২ বছরের পরিসংখ্যান আমলে নিলে দেখা যায়, ২০২১ সালে মোট ২৬ ম্যাচ খেলে মোটে ১০৫.৩ স্ট্রাইকরেটে রান তুলেছেন সাইলেন্ট কিলার খ্যাত রিয়াদ। সে বছর ২৬ ম্যাচে ৪৭১ বল খেলে ৪৯৬ রান করেন তিনি। ক্যারিয়ারের ৬টি অর্ধশতকের ২টি এ সময়ে করেছেন তিনি।

২০২২ সালে  তো রিয়াদের ফর্ম আরও পড়তির দিকে। এ বছর ৭ ম্যাচ খেলে ১৭ এর একটু বেশি গড়ে ১২৪ রান করেছেন তিনি। এই রান করতে খেলেছেন ১১৫ বল। স্ট্রাইকরেট মাত্র ১০৭.৮!

আরও পড়ুন:সাকিবদের টিম হোটেলে হঠাৎ উপস্থিত পাপন-জালাল

টাইগার একাদশে পেসার হিসেবে বরাবরই অটোচয়েজ মুস্তাফিজুর রহমান। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে সাকিবের পর সফলতম বাংলাদেশি খেলোয়াড় হিসেবে তাকেই গণ্য করা হয়। বাঁহাতি এই পেসারের প্রধান অস্ত্র কাটার। ক্যারিয়ারের শুরুতে কাটার দিয়ে যে প্রত্যাশার পারদ চড়িয়েছিলেন সময়ের সঙ্গে আরও নতুন অস্ত্রে নিজেকে বিশ্বসেরা পর্যায়ে নিয়ে যাবেন, এমনটা প্রত্যাশা ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকদের। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে প্রশ্ন উঠে গেছে সাতক্ষীরা এক্সপ্রেসকে নিয়েও।

এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৭ উইকেটে হারা ম্যাচে নখদন্তহীন বোলিং করেছেন মুস্তাফিজ। এক ওভারেই ১৭ রান খরচ করে দলের হারে বড় অবদান তারও। দেশের মাটিতে সফল হলেও বিদেশের মাটিতে কাটার মাস্টার ব্যর্থ হচ্ছে বারবার। তবুও দলে টিকে থাকতে প্রতিযোগিতায় পড়তে হয়নি তাকে।

গত দুই বছরে ২২ টি-টোয়েন্টি খেলে ২৩টি উইকেট নিয়েছেন বাংলাদেশের এই বোলিং ভরসা। এ সময়ে ২৫ গড়ে উইকেট নিয়েছেন ২৩টি। ইকোনমি ৮.০৫। ৭০ ম্যাচের ক্যারিয়ারে এ সময়ে বোলিং গড় ও ইকোনমি দুটোই বেড়েছে তার। তবে শুধু বিদেশে খেলা ম্যাচ আমলে নিলে এ সময়ে তার পরিসংখ্যান আরও জঘন্য।

২০২১-২২ পর্যন্ত বিদেশে খেলা ১৬ ম্যাচে মুস্তাফিজের গড় ৩৩.১৩! বেড়েছে ইকোনমি রেটও ৯.৩৭!

টি-টোয়েন্টিতে নতুন করে শুরু করতে চাওয়া টাইগারদের বোর্ড ম্যানেজমেন্ট অবশ্য ভাঙতে চাচ্ছেন এই অটোচয়েজ প্রথা। বুধবার (৩১ আগস্ট) বোর্ড পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজন বলেছিলেন। ‘ অটোচয়েজ প্রথা ভাঙার সময় হয়েছে। গেল ১৫-১৬ ম্যাচে ও (ফিজ) ভালো করতে পারছে না। এটা ভয়ের কারণ। তবে বিশ্বাস আছে সে কামব্যাক করবে।’  পারফরম্যান্সের ভিত্তিতেই দলে জায়গা হবে, এমন আশার বাণী শোনালেও শেষপর্যন্ত তারা নিজেদের সিদ্ধান্তে অটল থাকতে পারে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। জিম্বাবুয়ে সিরিজে নতুনের জয়গান গেয়ে গেয়ে বিমানে উঠলেও নিজেদের সিদ্ধান্তে অটল থাকতে পারেনি বোর্ড।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অবশ্য পরিবর্তনের আভাস। বাঁচামরার ম্যাচে ওপেনিং জুটিতে পরিবর্তন হচ্ছে তা ধরেই নেওয়া যায়। সেই বক্তব্যে সুজন আরও বলেছিলেন, ‘হতে পারে (চেঞ্জ)। তবে যে ধাক্কা খেলাম! সাকিবের অধিনায়কত্ব দারুণ। তার জন্যই ম্যাচটা এতদূর গিয়েছিল। কালকের খেলা অনেক চ্যালেঞ্জিং। তবে আমরা জিততে চাই।’

তবে দলের অটোচয়েজ তারকারা ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ হলেও তাদের বেলা এই ক্রিকেট কর্তার কথা কতটুকু খাটে তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। পরিবর্তন চাইলেও হয়তো মনের ভেতরটা বলে উঠবে, বিকল্প নেই!

Leave A Reply

Your email address will not be published.