এশিয়া কাপ পান্ডিয়ার ব্যাটে কুপোকাত পাকিস্তান

শেষ ওভার পর্যন্ত ছিল ম্যাচের উত্তেজনা। ১৯তম ওভার পর্যন্ত হারের শঙ্কা জাগছিল ভারত শিবিরে। তবে ক্রিজের একপ্রান্তে দাঁড়িয়ে সব শঙ্কা উড়িয়ে ২ বল হাতে রেখেই পাকিস্তানকে কুপোকাত করে দলের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন হার্দিক পান্ডিয়া।

0 12,662

দুবাইয়ে রোববার (২৮ আগস্ট) এশিয়া কাপে গ্রুপ ‘এ’র ম্যাচে পাকিস্তানের দেয়া ১৪৮ রান তাড়া করতে নেমে ১৯.৪ ওভারে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ভারত। ১৭ বল মোকাবিলায় ৪ বাইন্ডারি ও এক ওভার বাউন্ডারিতে ৩৩ রানে অপরাজিত থাকেন পান্ডিয়া। তাকে সঙ্গ দিয়ে দলের জয়ে ভূমিকা রাখেন রবীন্দ্র জাদেজা। সমান দুই চার ও ছক্কার মারে ২৯ বলে ৩৫ রান করেন জাদেজা।

এর আগে ইনিংসের শুরুতে ভারতকে প্রথমেই চাপে ফেলেন নাসিম শাহ। রান তাড়া করতে নেমে মাত্র ১ রানে লোকেশ রাহুলের উইকেট হারায় ভারত। অভিষিক্ত নাসিম শাহের করা বলটি রাহুলের ব্যাটে ইনসাইড এজ হয়ে স্টাম্প স্পর্শ করে। একই ওভারে বিরাট কোহলিও ফিরে যেতে পারতেন প্যাভিলিয়নে, যদি না গালি সেকেন্ড স্লিপে দাঁড়ানো ফখর জামান ক্যাচটি মিস করতেন।

দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৪৯ রান তুলে ভারতকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাচ্ছিলেন কোহলি-রোহিত। এরপর আক্রমণে নেওয়াজ এসে ম্যাচটি ঘুরিয়ে নিলেন ১৮০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে। নেওয়াজের করা ইনিংসের অষ্টম ওভারের শেষ বলটি লং অফের ওপর দিয়ে তুলে মারতে গিয়ে রোহিত ধরা পড়েন ইফতিখারের হাতে। ১৮ বলে ১২ রান করে ফেরেন রোহিত।

রোহিত-কোহলিকে হারিয়ে চাপে পড়া ভারতকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন সূর্যকুমার। ইনিংসের ১৫তম ওভারের দ্বিতীয় বলে নাসিমের করা সিম আপ ডেলিভারি, পড়ার পর একটু ঘুরে ভেতরের দিকে ঢুকল তীক্ষ্ণভাবে। আড়াআড়ি খেলার চেষ্টা করা সূর্যকুমারের ব্যাট ফাঁকি দিলে বল হিট করে অফ স্টাম্পে। ১৮ বলে ১৮ রান আসে তার ব্যাট থেকে।

মাঝে এক ওভার বিরতি দিয়ে ফের পরের ওভারের প্রথম বলে বিরাট কোহলিকে ফেরান নেওয়াজ। জায়গা বানিয়ে তুলে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন কোহলিও। লং অফে আবারও ইফতিখার আহমেদের হাতে ক্যাচ যায়। ৩৪ বল মোকাবিলায় ৩ চার ও এক ছক্কায় ৩৫ আসে কোহলির ব্যাট থেকে। এরপর নেওয়াজ দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন হ্যাটট্রিকের সামনে, তবে সূর্যকুমার যাদব তেমন কিছু হতে দেননি।

১৮ ওভার শেষেও ম্যাচের ফল দুলছিল দুই দিকেই। জয়ের জন্য তখনো ১২ বলে ২১ রান দরকার ছিল ভারতের। তবে ১৯তম ওভারে এসে হারিসের এক ওভারে তিন বাউন্ডারিসহ ১৪ রান তুলে ম্যাচ নিজেদের করে নেন পান্ডিয়া। শেষ ওভারের প্রথম বলে জাদেজা বোল্ড হলে আরো একবার ম্যাচে ফেরার স্বপ্ন দেখে পাকিস্তান। তবে পান্ডিয়ার এক ছক্কায় সে স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায় বাবরদের। তাতে ৫ উইকেটের জয় নিশ্চিত হয়ে যায় ভারতের। পাকিস্তানের পক্ষে ৩৩ রান খরচায় ৩ উইকেট শিকার করেন নেওয়াজ। ২৭ রান খরচায় ২ উইকেট শিকার করেন নাসিম শাহ।

এর আগে সব কটি উইকেট হারিয়ে ১৪৭ রান করে পাকিস্তান। যেখানে শেষ চার ব্যাটারের অবদান তিরিশেরও বেশি। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ভারতের দুই পেসার ভুবনেশ্বর কুমার ও আর্শদীপ সিংয়ের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে প্রথম দুই ওভারে ১৪ রান তুলে বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ানের উদ্বোধনী জুটি।

ভুবনেশ্বর নিজের প্রথম ওভারে দেন ৬ রান। আর্শদীপ দুটি ওয়াইডসহ প্রথম ওভারে দেন ৮ রান। পরের ওভারে বাবর আজমকে শিকারে পরিণত করেন ভুবনেশ্বর। শর্ট বল খেলতে গিয়ে ফাইন লেগে ক্যাচ তুলে দেন পাকিস্তান অধিনায়ক। ১০ রান করে প্যাভিলিয়নে ফেরেন তিনি।

পাওয়ার প্লেতে ৪৩ রান তোলে পাকিস্তান। এর মধ্যে আরেকটি উইকেট হারিয়ে ফেলে বাবর বাহিনী। এবারও কাল হয়ে দাঁড়ায় শর্ট বল। আভেশ খানের ছোড়া বলে ব্যাট লাগিয়ে মাঠ ছাড়েন ফখর জামান। তার ক্যাচটি ধরেন উইকেটরক্ষক দিনেশ কার্তিক।

দুই ব্যাটার আউট হয়ে গেলেও হাল ধরে রেখেছিলেন ওপেনার রিজওয়ান। যদিও ১০ ওভার শেষে তার স্ট্রাইকরেট ছিল একশরও নিচে। ১০ ওভার শেষে পাকিস্তানের দলীয় সংগ্রহ দাঁড়ায় ৬৮।

১১ আর ১২, এই দুই ওভারে ১৯ রান তোলে পাকিস্তান। ১৩তম ওভারের প্রথম বলেই আউট হন ইফতেখার। হার্দিক পান্ডিয়ার শর্ট বলে তিনিও ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে। আউট হওয়ার আগে ২২ বলে ২ চার ও এক ছয়ে ২৮ রান করেন তিনি।

হাল ধরে রাখা রিজওয়ান আউট হন অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবে। পান্ডিয়ার বলে থার্ডম্যান অঞ্চলে আভেশ খানকে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। ৭ রানের জন্য হাফসেঞ্চুরি মিস করেন তিনি। ৪২ বলে করেন ৪৩ রান। পান্ডিয়া একই ওভারে তুলে নেন খুশদিল শাহের উইকেট। শাহ করেন মাত্র ২ রান।

এশিয়া কাপকে সামনে রেখে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৫০টির মতো ছক্কা মারার অনুশীলন করেছিলেন মোহাম্মদ আসিফ। দুবাইয়ের উইকেটে এদিন তিনিও মেলে ধরতে পারেননি নিজেকে। ৭ বলে খেলে ৯ রান করে আউট হন এ হার্ডহিটার। নেওয়াজ ৩ বলে ১ রান করে বিদায় নেন। তার উইকেটটি শিকার করেন আর্শদীপ সিং।

ভুবনেশ্বরের বলে রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি অলরাউন্ডার শাদাব খান। নাসিম শাহ ফেরেন গোল্ডেন ডাক দিয়ে। শেষ দিকে দাহানি ঝড়ের পর পাকিস্তান অলআউট হয় ১ বল বাকি থাকতে। ৬ বলে ১৬ রান করে আউট হন তিনি। হারিস রউফ অপরাজিত ছিলেন ১৩ রান নিয়ে। ভারতের হয়ে ভুবনেশ্বর কুমার নেন ৪ উইকেট। ৩টি উইকেট পান পান্ডিয়া। আর্শদীপ ২টি ও আভেশ একটি উইকেট নেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.