পি কে হালদারকে আনতে সর্বাত্মক উদ্যোগ নেওয়া হবে: আইনমন্ত্রী

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, পিকে হালদার ভারতে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকলেও, যেহেতু বাংলাদেশে মূল অপরাধ করেছেন; অতএব তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য সর্বাত্মক উদ্যোগ নেওয়া হবে। ভারতে বিচার শুরু হওয়ার পি কে আগে চাইবে বাংলাদেশ। এন্টি মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট অনুসারে আগের তুলনায় পাচারকৃত টাকা ফেরত আনাও অনেকটা সহজ হবে।

0 10,156

সোমবার (১৭ মে) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এসডিজি বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা বিষয়ক দ্বিতীয় জাতীয় সম্মেলনের প্যারালাল সেশনে বক্তব্যের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ সব কথা বলেন তিনি।


তিনি বলেন, সাস্টেনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল বা এসডিজি প্রোগ্রাম হাতে নেওয়ার আগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির ব্যাপারে, সন্ত্রাসের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছিলেন। সেই নীতি অনুযায়ী এসব দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট সংস্থা যে পদক্ষেপ নেওয়ার সেগুলো নিচ্ছে। পিকে হালদার কে গ্রেফতার করা হয়েছে। এখন তার ব্যাপারে যে অভিযোগ আনা হয়েছে সেই অভিযোগের বিচার হবে। তার পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা অনেক।
প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে তাকে ফিরিয়ে আনার সঙ্গে সঙ্গে তার বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হবে।

আইনমন্ত্রী বলেন, ফিরিয়ে আনাটা খুব কঠিন। তবে আরাফাত রহমান কোকোকে ফিরিয়ে আনার সময়ে যে সমঝোতা হয়েছিল, সে তুলনায় বর্তমানে পিকে হালদারকে ফিরিয়ে আনা সহজ হবে। কারণ অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে অনেক কঠোর আইন আছে সব দেশে। সে কারণে সঠিকভাবে পদক্ষেপ নিলে পাচারকৃত অর্থও ফিরিয়ে আনা সহজ হবে।
 

তাকে ফিরিয়ে আনতে ভারতের সঙ্গে আলোচনা হবে। আর যেহেতু সে এখানেই মূল অপরাধ করেছে অতএব ভারতে বিচারকাজের আগেই তাকে বাংলাদেশ ফেরত চাইবে।

এর আগে আইনমন্ত্রী বলেন, এসডিজির অন্যতম টার্গেট জনগণের ন্যায়বিচারে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ন্যায়বিচারে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে সরকার ডিজিটাইজেশনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। এর অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও অধস্তন আদালতে সীমিত পরিসরে ডিজিটাইজেশন চালু করা হয়েছে। অধিকন্তু আইন ও বিচার বিভাগ একটি গণমুখী বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যুগান্তকারী ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্প হাতে নিয়েছে।

আইনমন্ত্রী আরও বলেন, জনগণের ন্যায়বিচারে প্রবেশাধিকার সংরক্ষণের জন্য করোনার মহামারিকালেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় আইন ও বিচার বিভাগ ‘আদালত কর্তৃক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ, ২০২০ এর আওতায় ভার্চুয়াল আদালত ব্যবস্থা চালু করে। ১১ মে ২০২০ থেকে ১০ আগস্ট ২০২১ সময়কালে এ আদালত দ্বারা মোট ৩ লাখ ১৪ হাজার ৪৮২টি পিটিশন নিষ্পত্তি করা হয়েছে। ১ লাখ ৫৮ হাজার ৫০৭ জনকে জামিন দেওয়া হয়েছে, যা করোনাকালে জরুরি সমস্যা মোকাবেলায় এবং কারাগারে বন্দীদের বাড়তি চাপ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার জেলা লিগ্যাল এইড অফিস, উপজেলা ও ইউনিয়ন লিগ্যাল এইড কমিটি প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ায় সরকারি আইনি সহায়তা কার্যক্রম এখন দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে। এমনকি করোনার মহামারিকালে ভার্চুয়াল মাধ্যমে ৭৮ হাজার ৮৪৭ জনকে আইনি

আইনমন্ত্রী বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নের যাত্রায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ৭ম এবং ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে একটি সমন্বিত কর্মপদ্ধতি গ্রহণ করেছে এবং মন্ত্রণালয়গুলোর ম্যাপিং, আর্থিক কৌশল, পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন, ডেটা গ্যাপ বিশ্লেষণ, জাতীয় কর্ম পরিকল্পনা, এপিএ-তে এসডিজি অর্ন্তভুক্তসহ অনেকগুলো কাজ সম্পন্ন করেছে।

তিনি বলেন, জাতি হিসেবে আমরা গর্বিত বোধ করি যে, জাতিসংঘের পৃষ্ঠপোষকতাকৃত টেকসই উন্নয়ন সমাধান নেটওয়ার্ক ২০১৫-২০২০ সালের মধ্যে অধিকাংশ এসডিজি বাস্তবায়নের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘SDG Progress Award 2021’-এ ভূষিত করেছে। এ পুরস্কার দারিদ্র্যের অবসান, পৃথিবী নামক গ্রহ রক্ষা এবং শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার বৈশ্বিক আহ্বানের প্রতি আমাদের ঐক্য ও অঙ্গীকারের প্রতীক।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্যের জন্য বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছিল। সেই সাফল্যের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের এমডিজি অ্যাওয়ার্ড, সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ড, চ্যাম্পিয়নস অফ দ্য আর্থ এবং প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন সহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ব পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার একটি জনকেন্দ্রিক আধুনিক গণতন্ত্র গ্রহণ করেছে। ফলে দেশে সর্বোচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা শক্তিশালীসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হয়েছে, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিসহ দারিদ্র্য হ্রাস পেয়েছে। আর এসব উন্নয়ন বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়ার ক্ষেত্রে অবদান রেখেছে।

এসডিজি বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা বিষয়ক তিনদিন ব্যাপী চলমান সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে আজ প্যারালাল সেশন- ১ এ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, জননিরাপত্তা বিভাগ, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, আইন ও বিচার বিভাগ এবং লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিবগণ তাদের স্ব-স্ব মন্ত্রণালয়/বিভাগের এসডিজি বাস্তবায়ন বিষয়ক অগ্রগতি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
Leave A Reply

Your email address will not be published.