২০২৩ সালে উৎপাদনে যাবে, দোয়া চাইলেন প্রধানমন্ত্রী

0 16,820

২০২৩ সালের মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জন্য তিনি দেশের সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। বুধবার (১৯ অক্টোবর) পাবনার ঈশ্বরদীতে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল (পারমাণবিক চুল্লিপাত্র) স্থাপনকাজের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ কথা জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২৩ সালের মধ্যেই প্রথম ইউনিট উৎপাদনে যাবে। সবাইকে বলবো- দোয়া করেন, যাতে আমরা এটা ঠিক মতো করতে পারি। আশা করি দ্বিতীয় ইউনিটও ২০২৪ সালের মধ্যে উৎপাদনে যাবে। দুই ইউনিট মিলে ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিবেশের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এখন যেমন সবাই জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে উদ্বিগ্ন। আমাদের কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো রকম পরিবেশের ওপর প্রভাব পড়বে না। সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদন করে মানুষকে দিতে পারবো।

jagonews24

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, শান্তি ও উন্নয়নের জন্য পরমাণু শক্তির ব্যবহারের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাংলাদেশ। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র শুধু বিদ্যুৎকেন্দ্র না, এটা একটা দৃষ্টান্ত, আমরা এ ধরনের একটা কাজ করতে পারি। পরিবেশ ঠিক রেখে আমরা ২৪শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে যাচ্ছি। এতে আমাদের দেশের মানুষ খুব স্বচ্ছ একটা বিদ্যুৎ পাবে। যা দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বিরাট অবদান রাখবে।

দেশে বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা অর্জনের পর জাতির পিতা কতগুলো পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। যা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি ক্ষেত্রে তিনি নিজের টাকায় সব গ্যাস ফিল্ড ক্রয় করেন। আমাদের যখন চরম দুরবস্থা তখনও তিনি ভুলেননি যে, এই সম্পদ বাংলাদেশের মানুষের সম্পদ। এটা যে সার্বভৌম বাংলাদেশের সম্পদ সেটা তিনি নিশ্চিত করে যান। বাংলাদেশের মালিকানা প্রতিষ্ঠা করেন। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণেও তিনি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। সেসময়ে এটা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল।

jagonews24

শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ সালে নির্বাচনে জয়ী হয়ে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেই। সে সময় রাশিয়া যাই। বন্ধুরাষ্ট্র রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ বিষয়ে আলোচনা করি এবং একটা চুক্তিও সই করে আসি। এটা নিয়ে কয়েক দফা সভা হয়। বিশেষ করে রোসাটমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা হয়। পরমাণু শক্তির ব্যবহারটা মানুষের কল্যাণের জন্য। কিন্তু এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। সেক্ষেত্রে আমাদের লোকবল সৃষ্টি, তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা বা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করাসহ অনেকগুলো বিষয় থাকে- এনিয়ে আমরা দীর্ঘ আলোচনা করি এবং ব্যবস্থা নেই।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা মুখ্য বিষয় ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০১৩ সালের অক্টোবরে যখন আমরা প্রকল্পটি উদ্বোধন করি। তখন থেকে এর মানটা নিশ্চিত রাখার জন্য বিশেষভাবে যত্নবান হই। আমেরিকা, রাশিয়া বা জাপানে যেসব দুর্ঘটনা ঘটেছিল, সেগুলো মাথায় রেখেই ভবিষ্যতে যেন কোনো ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে সেই ব্যবস্থা নেই। ২০১৭ সালে আমি ভিয়েনা সফর করি। সেখানে আন্তর্জাতিক শক্তি কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করি। সে আলোচনায় আমাদের পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয় ছিল মুখ্য।

jagonews24

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে আজকে অনেক দূর এগিয়ে গেছি। সেজন্য আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ রাশিয়াকে ধন্যবাদ জানাই। পাশাপাশি আমাদের দেশের যারা দিনরাত এই প্রকল্পে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, তাদেরকেও ধন্যবাদ জানাই। বিশেষ করে ঈশ্বরদী ও পাবনার জনগণকে। এই প্রকল্প করতে গিয়ে তাদের সহযোগিতা পেয়েছি।

করোনার মধ্যে বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা থাকা সত্ত্বেও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ চলায় ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি আরও বলেন, করোনার মধ্যে সারাবিশ্বে একটা অর্থনৈতিক মন্দা এবং বিশ্বব্যাপী স্থবিরতা ছিল, কিন্তু এখানে সবাই কাজ করেছেন। থেমে যায়নি কাজ।

অনুষ্ঠানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, রাশিয়ার পরমাণু শক্তি সংস্থা রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ, পরমাণু বিজ্ঞানী ও রূপপূর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের পরিচালক ড. মো. শৌকত আকবরসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

এসইউজে/জেডএইচ/এমএস JN

Leave A Reply

Your email address will not be published.