করোনা সংক্রমণ বাড়লেও বেপরোয়া সাধারণ মানুষ

করোনা সংক্রমণ বাড়লেও এখনো বেপরোয়া সাধারণ মানুষ। সরকারের ১১ দফা নির্দেশনা কার্যকরের তৃতীয় দিনেও স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি বেশির ভাগ জায়গায়।

0 9,239

গণপরিবহন কিংবা বাজার-সবখানেই মাস্ক ব্যবহারে অনীহার ছাপ দেখা গেছে। নির্দেশনা অমান্য করে বাসে দাঁড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে যাত্রীদের। ট্রেনে অর্ধেক যাত্রী নেওয়া হলেও স্টেশনে উপেক্ষিত রয়েছে স্বাস্থ্যবিধি। এদিকে নির্দেশনা মানলে লকডাউনের প্রয়োজন হবে না বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

 
শনিবার (১৫ জানুয়ারি) ছুটির দিন হওয়ায় এমনিতেই গণপরিবহনে চাপ থাকে তুলনামূলক কম। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী বাসের সব আসনে নেওয়া যাবে যাত্রী। তবে কোনোভাবেই দাঁড়িয়ে যাত্রী না নেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না কোনো বাসে। অনেক যাত্রীর মুখে মাস্ক ব্যবহারেও অনীহা লক্ষ করা গেছে।
 
নগরীর ব্যস্ততম জায়গাগুলোতেও পুরোপুরি উপেক্ষিত রয়েছে স্বাস্থ্যবিধি। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মতো জনবহুল জায়গাতেও সিংহভাগ মানুষকে দেখা যায় মাস্ক ছাড়া।
 
তবে ট্রেনের চিত্র কিছুটা ভিন্ন ছিল। শনিবার থেকে শুরু হয় অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে যাত্রী পরিবহন। যদিও প্লাটফর্ম ও স্টেশনে স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি অনেককেই।

এদিকে আজ মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, জনগণ করোনার বিধিনিষেধ মানলে দেশে লকডাউনের প্রয়োজন হবে না। বলেন, দেশে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ রোধে চলমান ১১ দফা বিধিনিষেধ অমান্য করলে লকডাউন দেওয়া হতে পারে।
 
তিনি আরও বলেন, করোনা সংক্রমণ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েই চলছে। সরকারের দেওয়া ১১ দফা বিধিনিষেধ না মানলে দেশের পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে। লকডাউন দিলে দেশের অনেক ক্ষতি হবে। আমরা সেদিকে যেতে চাই না, তাই সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। যদি বিধিনিষেধ অমান্য করা হয় তাহলে লকডাউন দেওয়া হবে। সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে এসব নির্দেশনা মানার বিকল্প নেই।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাব ও দেশে এ রোগের সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখা এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ১৩ জানুয়ারি থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। ১৩ জানুয়ারি থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ ১১ দফা মেনে চলতে হবে।
 
নির্দেশনাগুলো হলো-
১. দোকান, শপিংমল ও বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা এবং হোটেল-রেস্তোরাঁসহ সব জনসমাগমস্থলে বাধ্যতামূলক সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। অন্যথায় তাকে আইনানুগ শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।

২. অফিস-আদালতসহ ঘরের বাইরে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে ব্যত্যয় রোধে সারা দেশে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে হবে।

৩. রেস্তোরাঁয় বসে খাবার গ্রহণ এবং আবাসিক হোটেলে থাকার জন্য অবশ্যই করোনার টিকা সনদ প্রদর্শন করতে হবে।

৪. ১২ বছরের বেশি বয়সী সব শিক্ষার্থীকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নির্ধারিত তারিখের পরে টিকা সনদ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না।
৫. স্থলবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরে স্ক্রিনিংয়ের সংখ্যা বাড়াতে হবে। পোর্টগুলোতে ক্রুদের জাহাজের বাইরে আসার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করতে হবে। স্থলবন্দরগুলোতেও আগত ট্রাকের সঙ্গে শুধু ড্রাইভার থাকতে পারবে। কোনো সহকারী আসতে পারবে না। বিদেশগামীদের সঙ্গে আসা দর্শনার্থীদের বিমানবন্দরে প্রবেশ বন্ধ করতে হবে।

৬. ট্রেন, বাস এবং লঞ্চে সক্ষমতার অর্ধেকসংখ্যক যাত্রী নেওয়া যাবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কার্যকারিতার তারিখসহ সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারি করবে। সর্বপ্রকার যানের চালক ও সহকারীদের আবশ্যিকভাবে কোভিড-১৯ টিকা সনদধারী হতে হবে।
৭. বিদেশ থেকে আসা যাত্রীসহ সবাইকে বাধ্যতামূলক কোভিড-১৯ টিকা সনদ প্রদর্শন করতে হবে।
৮. স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন এবং মাস্ক পরার বিষয়ে সব মসজিদে জুমার নামাজের খুতবায় ইমামরা সংশ্লিষ্টদের সচেতন করবেন। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা এ বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।

৯. সর্বসাধারণের করোনার টিকা এবং বুস্টার ডোজ গ্রহণ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় প্রচার এবং উদ্যোগ গ্রহণ করবে। এক্ষেত্রে তারা তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সহায়তা গ্রহণ করবে।

১০. উন্মুক্ত স্থানে সর্ব সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং সমাবেশ পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হবে।

১১. কোনো এলাকার ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সেক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নিতে পারবে।
Leave A Reply

Your email address will not be published.