মধ্যরাতে আঘাত হানবে ‘সিত্রাং’,

0 14,876

সোমবার বিকেল থেকেই ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ এর অগ্রভাগ বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে। এর প্রভাবে রংপুর ছাড়া সারাদেশে ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টি হচ্ছে। একই সঙ্গে উপকূলীয় অঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানে বইছে দমকা বাতাস। রাত ৯টা নাগাদ কক্সবাজারে সর্বোচ্চ ৭৪ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার খবর দিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর।

ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র (চোখ) সোমবার মধ্যরাত বা মঙ্গলবার ভোররাত নাগাদ ভোলার কাছ দিয়ে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হানতে পারে। বিপৎসংকেতও আর বাড়বে না।

সোমবার (২৪ অক্টোবর) রাতে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান জাগো নিউজকে এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের উপকূল অতিক্রম বিকেল থেকেই শুরু হয়েছে। অগ্রভাগের প্রভাবে বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া বইছে। কক্সবাজারে ৭৪ কিলোমিটার বেগে ও ঢাকায় ৭০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের খবর পেয়েছি আমরা।

সংকেত আর বাড়বে না জানিয়ে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ৭ নম্বর বিপৎসংকেত ও কক্সবাজার বন্দরে ৬ নম্বর বিপৎসংকেত রয়েছে। বিপৎসংকেত এ পর্যন্তই থাকবে। ৭-এর ওপরে আর উঠবে না।

ঘূর্ণিঝড়টি আর শক্তিশালীও হবে না। যতই রাত হবে, শক্তি ক্রমেই ক্ষয়ে যাবে। কেন্দ্র স্থলভাগে আঘাত করার পর এটি ক্রমেই দুর্বল হয়ে যাবে, বলেও জানান পরিচালক।

এর আগে তিনি বিকেলে জানিয়েছিলেন, ঘূর্ণিঝড়টি দ্রুত বাংলাদেশের দিকে আসছে। আগে ২০ কিলোমিটার বেগে এগোচ্ছিলো, এখন ৩০ কিলোমিটার বেগে এগোচ্ছে। গতি বাড়িয়ে দিয়েছে।

এরই মধ্যে ঝোড়ো বাতাসে উপকূলীয় এলাকার অনেক স্থানে গাছসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভেঙে পড়েছে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে বিস্তীর্ণ অঞ্চল। দুপুর থেকেই বন্ধ আছে সব ধরনের নৌযান চলাচল।

স্থলভাগে আঘাত হানার সময় ‘সিত্রাং’-এর বাতাসের গতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৯০ কিলোমিটার থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।

বাতাসে শক্তি কম থাকলেও অমাবস্যার কারণে সর্বোচ্চ ৮ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের কারণে উপকূলের ক্ষয়ক্ষতি বেশি হতে পারে বলেও জানিয়েছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ নিয়ে সর্বশেষ (সন্ধ্যা ৬টা) বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ২৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ২৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ২২০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্ব্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে।

আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন জানান, ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ, অমাবস্যা তিথি ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৮ ফুটের বেশি উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, কুমিল্লা, ফরিদপুর, ঢাকা, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার নদীবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর নৌ-বিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলেছে আবহাওয়া বিভাগ।

আরএমএম/বিএ/এমএইচআর jn

Leave A Reply

Your email address will not be published.