পরীমনিকে লিগ্যাল নোটিশ

চিত্রনায়িকা পরীমনিকে লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খন্দকার হাসান শাহরিয়ার এবং ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী ইসমাতুল্লাহ লাকী তালুকদার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে তার সব প্রকার অশ্লীল ছবি, ভিডিও সরানোর জন্য ৩০ দিনের সময় দেওয়া হয়েছে পরীমনিকে।

0 4,909

পাশাপাশি ভবিষ্যতে সব প্রকার অশ্লীল সংলাপ, অভিনয়, অঙ্গভঙ্গি, নগ্ন বা অর্ধনগ্ন নৃত্য যাহা চলচ্চিত্র, ভিডিও চিত্র, অডিও ভিজ্যুয়াল, স্থিরচিত্র, গ্রাফিকস বা অন্য কোনো উপায়ে ধারণকৃত ও প্রদর্শনযোগ্য এবং যার কোনো শৈল্পিক বা শিক্ষাগত মূল্য নেই তা করা থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকার জন্য লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) রেজিস্ট্রি ডাকযোগে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ঠিকানায় শামসুন্নাহার স্মৃতি ওরফে পরীমনিকে লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছেন পাঠানো হয়েছে।

নোটিশে বলা হয়, শামসুন্নাহার স্মৃতি ওরফে পরীমনি গত ১ সেপ্টেম্বর মাদক মামলায় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান। কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পরীমনির হাতের তালুতে লেখা ছিল ‘ডোন্ট লাভ মি বিচ’। এরপর বিগত ১৫ সেপ্টেম্বর পরীমনি মামলার শুনানির জন্য আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত হন। সেদিনও তার হাতের তালুতে আরেকটি অশ্লীল কথা ‘ফাক মি মোর’ লিখে সবার সামনে তুলে ধরেন। এর ঠিক একদিন পরেই দিনগত রাতে পরীমনি নিজের ফেসবুকে দুটি ছবি পোস্ট করেন।

যেখানে পরীমনির হাতে দেখা যায়, জ্বলন্ত সিগারেট এবং হাতের তালুতে লেখা রয়েছে সেই অশ্লীল বাক্য। পরীমনির পরনে ছিল কালারফুল প্রিন্টের টপস, খোলা চুলে চোখে চশমা, পায়ে লাল-কালো রংয়ের কেডস। প্রায় অর্ধনগ্ন ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে পরীমনি লিখেছেন, ‘সিগারেট স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর!’।

পরীমনি তার হাতের তালুতে যে সাইনটা দেখিয়েছেন, সেটি অত্যন্ত অসম্মানজনক। কারণ একেকটি ফিঙ্গার দেখিয়ে, একেকটি মিনিং বোঝানো হয়। এরমধ্যে ‘মধ্যমা আঙ্গুল’ অশ্লীল ইঙ্গিত দিতে ব্যবহার করা হয়। এটি বিদেশে বহুল ব্যবহৃত। পরীমনির মতো একজন চলচ্চিত্র অভিনেত্রীর কাছ থেকে অশ্লীলতা প্রকাশে এসব প্রদর্শন কোনোভাবেই কাম্য নয়।

এছাড়া পরীমনি গত ২৪ অক্টোবর ঢাকার হোটেল রেডিসন ব্লুতে ৩০তম বার্থডে পার্টির আয়োজন করেন। সেদিন পরীমনির গায়ে ছিল লাল রঙের শার্ট, যেটি পেট বরাবর বাঁধা। সঙ্গে পরেছিলেন সাদা ধুতির মতো এক ধরনের পোশাক, সেটি আবার লুঙ্গির মতো করে কাছা দেওয়া। অর্থাৎ উরু থেকে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত পুরোটাই উদোম। সেই সাথে ছিল পরীমনির অশ্লীল অঙ্গ-ভঙ্গির নাচ।

হোটেল রেডিসন ব্লুতে পরীমনির জন্মদিনের এই জমকাল আয়োজন এবং সাজ নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম খবর প্রকাশ করেছে এবং সেগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ারও করা হয়েছে। সেখানে পরীমনির এমন সাজকে অশ্লীল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পোস্ট হওয়া খবরের কমেন্ট বক্স ভরে গেছে নানারকম নেতিবাচক মন্তব্যে। নারী নেটিজেনরাই বেশি নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন।

লিগ্যাল নোটিশে আরও বলা হয়েছে, পরীমনি একজন চলচ্চিত্র অভিনেত্রী বিধায় অনেকেই তার আচার আচরণ, অঙ্গভঙ্গি, নাচ, পোশাক, চলাফেরা অনুকরণ ও অনুসরণ করে থাকে। ফলে তার অশ্লীল বাক্য, অঙ্গভঙ্গি, নগ্ন বা অর্ধনগ্ন নৃত্য, পোশাক এবং আপনার কর্মকান্ডের মাধ্যমে শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীরা এই আচরণ দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হতে পারে। শিশু-কিশোরদের গণ্ডি ছোট থাকে। চোখের সামনে তারা যা দেখে অনায়াসে তা আয়ত্ত করে ফেলে। টেলিভিশন, কম্পিউটার ও মোবাইলে এসব আলোচিত ঘটনার ছবি বারবার ভেসে উঠছে। সেগুলো তারা দেখছে। এর ফলে বিব্রতকর পরিস্থিতির তৈরি হচ্ছে। কারণ হাতে মেহেদি দিয়ে লেখা ‘ফাক মি মোর’ ও ‘মিডল ফিঙ্গার’ এর ছবি দ্বারা কী বোঝাচ্ছে তা তাদের মনে প্রশ্ন তৈরি করছে।

পর্নোগ্রাফি আইন-২০১২ সালের ২ এর ‘গ’ উপধারায় ‘যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী কোনো অশ্লীল সংলাপ, অভিনয়, অঙ্গভঙ্গি, নগ্ন বা অর্ধনগ্ন নৃত্য যাহা চলচ্চিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও ভিজ্যুয়াল, স্থিরচিত্র, গ্রাফিকস বা অন্য কোনো উপায়ে ধারণকৃত ও প্রদর্শনযোগ্য এবং যার কোনো শৈল্পিক বা শিক্ষাগত মূল্য নেই তাকে পর্নোগ্রাফি বলা হয়েছে। এই ধরনের অপরাধের শাস্তি সম্পর্কে একই আইনের ৮ ধারার ৪ উপধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি পর্নোগ্রাফি প্রদর্শনের মাধ্যমে গণউপদ্রব সৃষ্টি করিলে তিনি অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ২ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ডে দন্ডিত হইবেন। পর্নোগ্রাফি আইনের অপরাধসমূহ আমলযোগ্য এবং অ-জামিনযোগ্য অর্থাৎ জামিনযোগ্য নয়।

পরীমনি পর্নোগ্রাফি আইনে গ্রাফিকস বা অন্য কোনো উপায়ে ধারণকৃত ও প্রদর্শনযোগ্য এবং যার কোনো শৈল্পিক বা শিক্ষাগত মূল্য নেই সংজ্ঞামতে অপরাধ করেছেন। বাংলাদেশের সমাজ, সংস্কৃতির সুন্দর ঐতিহ্য আছে। শামসুন্নাহার স্মৃতি ওরফে পরীমনির কাছ থেকে বাংলাদেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের একজন শিল্পী হিসেবে সংযত ও দায়িত্বশীল আচরণ সকলে প্রত্যাশা করে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.