অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ হত্যার আসামি টেকনাফ থানার বহিষ্কৃত সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ সহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে আরো একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
১০ লাখ টাকা দাবি করে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে আরো পাঁচ লাখ টাকা না দেয়ায় টেকনাফের মাহমুদুর রহমান নামের এক প্রবাসীকে ক্রসফায়ারের নামে হত্যার অভিযোগ এনে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
আজ বুধবার (২৬ আগস্ট) দুপুর ২টায় টেকনাফ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (৩) আদালতে এজাহারটি দায়ের করা হয়। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন শুনানি শেষে এজাহারটি রুজু করে ঐ ঘটনায় অন্য কোনো হত্যা মামলা আছে কি না, ময়না তদন্তের রিপোর্টসহ আগামী ৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জানাতে টেকনাফ থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।
নিহত মাহমুদুর রহমানের ভাই নুরুল হোছাইন বাদি হয়ে এই মামলাটি দায়ের করেন।
বাদিপক্ষের আইনজীবী সাবেক এপিপি এডভোকেট মোহাম্মদ কাসেম আলী মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এজাহারে বাদি জানান, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি টেকনাফ মৌলভীপাড়া আলী আকবর পাড়ার মিয়া হোসেনের পুত্র প্রবাসী মাহমুদুর রহমানকে থানার এসআই দীপকের নেতৃত্বে একদল পুলিশ আটক করে নিয়ে যায়।
পরে দীপক ও ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ক্রসফায়ার না দেয়ার শর্তে প্রবাসীর পরিবারের লোকজন থেকে ১০ লাখ টাকা দাবি করে।
পরিবার নিরুপায় হয়ে পাঁচ লাখ টাকা দেয় কিন্তু আরো পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে পুলিশ।
দাবিকৃত পাঁচ লাখ টাকা না দেয়ায় ৩১ ফেব্রুয়ারি রাতে ক্রসফায়ারের নামে প্রবাসী মাহমুদুর রহমানকে হত্যা করা হয়।
এসব লেনদেনের কাজ করে হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের দফাদার নুরুল আমিন প্রকাশ নুরুল্লাহ।
মামলার এজাহারে এসআই দীপককে প্রধান ও বহিষ্কৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে ২নং এবং মোট ২৩ জনকে আসামী করা হয়। অন্যান্য আসামীরা হলো এসআই জামসেদ আহমদ, ওসি তদন্ত এবিএম এস দোহা, এসআই দিপনকর কর্মকার, এএসআই হিল্লোল বড়ুয়া, এএসআই ফরহাদ হোসেন, এএসআই আমির হোসেন, এএসআই সনজিত দত্ত, রুবেল শর্মা, সাগর দেব, জহির ড্রাইভার (ওসি প্রদীপের), হ্নদয় (রাঙামাটি জেলা), ব্যাটালিয়ন কং-৯৬১৬ সৈকত, ব্যাটালিয়ন কং-৯৯০১ উদয়, হ্নীলা ইউনিয়নের দফাদার প্রকাশ নুরুল্লাহ, হ্নীলা পুর্ব সিকদারপাড়ার মৃত আবু শামার পুত্র জাহাঙ্গীর আলম, নাটমুরা পাড়ার চৌকিদার নুরুল হোছাইন, পুর্ব সিকদার পাড়ার ভুট্টো, আনোয়ারুল ইসলাম ননাইয়া, পুর্ব পানখালী এলাকার নুরুল আলম, পুর্ব সিকদার পাড়ার মৃত নবী হোসনের ছেলে নুরুল আমিন।
মামলার এজাহারে আরো বলা হয়, নিহত মাহমুদুর রমানের কাছ থেকে ১৭নং আসামী হ্নীলার দফাদার নুরুল আমিন ওসির নাম বলে ১০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করেন। ঐ টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করে মাহমুদুর রহমান।
পরে দফাদার টাকা আদায় করতে না পেরে মাহমুদুর রহমান সন্তানের জন্য হ্নীলা বাজারে দুধ ও কাপড়ের জন্য গেলে দফাদার নুরুল্লাহ, জাহাঙ্গীর আলম, নুরুল হোছাইন চৌকিদার, ভুট্টো, আনোয়ারুল ইসলাম ননাইয়া, নুরু চৌকিদার, নুরুল আমিন চৌকিদারের সহায়তায় মাহমুদুর রহমানকে ধরে মোটরসাইকেল সহ টেকনাফ থানায় নিয়ে যায়।
সেখানে এসআই দীপক ১০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে, অন্যথায় লাশ গ্রহণের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলে।
এরপর বাদি নুরুল হোছাইনসহ বাড়ির লোকজন কোনোরকমে ৫ লক্ষ টাকা জোগাড় করে এসআই কদীপকের হাতে দেয়। এরপরও আরো ৫ লক্ষ টাকা না পেলে ৩১ মার্চ কথিত ক্রসফায়ার দিয়ে মাহমুদুর রহমানকে হত্যা করা হয়।