সোনার দোকানগুলো গহনা বিক্রির পাশাপাশি কিনেও থাকে, যদিও তা সামান্য। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারীকালে এখন চিত্র পুরো উল্টে গেছে।
গহনা ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখন বিক্রি প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমেছে, বরং কেনার জন্যই দোকান খোলা রাখতে হচ্ছে তাদের।
ঢাকার বায়তুল মোকাররম জুয়েলারি মার্কেটের শারমিন জুয়েলার্সের মালিক এনামুল হক খান দোলন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সারা দেশে সোনার গহনা বিক্রি শূন্যের ঘরে নেমে এসেছে। দেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এমন অবস্থা হয়নি।
“করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে মানুষের হাতে টাকা-পয়সা নেই। অলংকার কিনবে কী দিয়ে? অভাবের তাড়নায় যার কাছে যে সোনা আছে, তাই বিক্রি করে দিচ্ছে।”
সোনার দাম এখন বেড়ে যাওয়ায় সঙ্কটকালে বিকল্প পথ না খুঁজে অনেকে সোনা বিক্রি করাকেই সহজ সমাধান ভাবছেন বলে মনে করেন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) সভাপতি এনামুল।
দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব গত মার্চে দেখা দেওয়ার পর লকডাউনে বহু মানুষের জীবিকা সঙ্কটে ফেলে দেয়। বিধিনিষেধ উঠে এলেও পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি।
মহামারীকালে অনেকে চাকরি হারিয়েছেন, অনেকের চাকরি টিকলেও বেতন কমে গেছে কিংবা অনিয়মিত হয়ে পড়েছে।
এমনই ঘটনার শিকার হয়ে এক গৃহিনীকে তার বিয়ের সময়ে পাওয়া গহনা বিক্রি করতে দেখা গেল সোমবার দুপুরে বায়তুল মোকাররম মার্কেটে।
বেসরকারি চাকরিজীবী স্বামীর বেতনের সঙ্গে প্রতি মাসে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা থেকে আসা কিছু টাকা দিয়ে তাদের চারজনের পরিবার মোটামুটি মসৃণভাবেই চলছিল।
কিন্তু মহামারীতে তার স্বামীর বেতন দুই মাস ধরে বন্ধ। এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে যে বাড়িতে থাকেন, তার ভাড়া মেটানোও দায় হয়ে উঠছিল বলে হাত দিতে হয়েছে শখের বিয়ের গহনায়।
দুই ভরি সোনার অলঙ্কার বিক্রি করে মধ্যবয়সী এই নারী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় বলেন, “কী আর করব ভাই, এখন আর চলছে না।
“করোনাভাইরাস সবকিছু এলোমেলো করে দিয়েছে। এখন দামও বেশ বেশি; তাই দুই ভরি বিক্রি করে দিলাম। প্রয়োজনও মিটবে, দামও বেশি পাওয়া গেল।”
এই চিত্র শুধু ঢাকার নয়, দেশের অন্য খানেও।
নিজের একে ভরি সোনার গহনা বিক্রি করে পাবনার চাটমোহরের এক নারী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “টাকার খুব দরকার ছিল। দামও এখন বেশি পাওয়া যাচ্ছে; তাই বিক্রি করে দিলাম।”
চাটমোহরের রায় জুয়েলার্সের মালিক রনি রায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের দোকানে এখন কোনো ক্রেতা আসে না। তবে অনেকেই বিক্রি করতে আসেন।”
তবে সোনা বিক্রির কারণ হিসেবে দাম বেড়ে যাওয়াকেও দেখান তিনি।
“অভাবে পড়ে যে মানুষ গহনা বিক্রি করতে আসছেন, তেমনটা না। দাম বেশি পাওয়ার কারণেই বিক্রি করে দিচ্ছেন। অনেকে ভাবছেন, এত বেশি দাম আর কখনই পাওয়া যাবে না। অযথা এত দামি জিনিস বাড়িতে রেখে লাভ কী; যদি দাম কমে যায়। তাই বিক্রি করে দিচ্ছেন।”